আমরা কি এদেশে জন্মেছি পুড়ে মরার জন্য?
হাবিবুল্লাহ মারুফ : সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ভোর ৬টায় কনফারেন্স বউ বারবার বলল ঘুমাও। ছেলে মুসআব এর শরীরের হাত বুলিয়েছি কেঁদে ফেলেছি আগুনে পোড়া মানুষগুলোর জন্য। কতটা অসহায় আমরা! আগুন ধরলে রক্ষা করার মুরোদটুকু নেই রাষ্ট্রের! আমি অথবা আপনি যে কেউ কখনও যদি এই বিপদে পরি তাহলে ছেলে বউ বাবা মা সবাইকে নিয়ে পুড়ে মরতে হবে! ইয়া আল্লাহ আপনি ছাড়া আমাদের কেউ নাই দয়া করো মাবুদ।
আমরা কি এদেশে জন্মেছি পুড়ে মরার জন্য? স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাটুকু কি আমরা আশা করতে পারি না? কেন বারবার একই ট্র্যাজেডি? রাষ্ট্র কি দায়হীন জন্তু হয়ে গেছে, নাকি আমরা এমন ভাগ্য নিয়েই জন্মেছি??
মনটাকে বোঝাতে চেয়ে ব্যর্থ হইলাম। হাজার প্রশ্ন মনের ভেতরে উকি ঝুকি দিচ্ছিল। আচ্ছা লোকগুলো ছাদে উঠতে পারত না? ছাদ থেকে হেলিকপ্টার সংগ্রহ করে পাশের ব্লিডিং এর ছাদে নিতে কয় মিনিট সময় লাগত? আরে না ছাদ আটকানো ছিল। ভাবতেই নিজের বাসার কথা মনে হল আমার বাসার ছাদতো আবার তালাবদ্ধ থাকে। যদি আগুন লাগে কিভাবে মুসআবকে বের করব?
কলিগ জাহিদও জানাল রাত তিনটায় ঘুমিয়েছে। গত কালকের মূত্যু আতংক ওকে ঘুমাতে দেয়নি। এত মানুষের নির্ঘুম রাত কষ্ট কান্না শুনতে পাও তুমি রাষ্ট্র? মানুষ পোড়ার ঘ্রাণ নিতে কত বেশি ভাল লাগে তোমার?
এ অবরুদ্ধ নগরী থেকে জনতার মুক্তি চাই। এ মানুষের লাশের জন্য মোহগোস্থ পিচাশ নগরে মানুষ নামের পিচাশদের বিচার চাই। যারা জনতার ভ্যাট ট্যাক্স এর টাকায় নগর রক্ষা সংস্থায় চাকুরী করে অথচ মানুষকে রক্ষার জন্য কাজ করে না, নগরটাকে মৃত্যু ফাঁদ বানিয়ে ফেলছে। ওদের বিচার চাই।
কোটি হৃদয়ের আর্তনাদ কেউ কি শুনতে পান? সময় আছে শোনার মত?
১. ভারাক্রান্ত মন আকাশ সমান কষ্ট। লিখতে চাইলেও কোটি হৃদয়ের মত আমার হৃদয়েও কষ্ট্রের পোড়া দাগে ক্ষত বিক্ষত। দেশ নিয়ে উন্নয়নের কথা গুলো টকশো পাড়া চেতনা পাড়া এবং কর্তাদের মুখে শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমরা। চকবাজারের বিভৎস মানুষ পোড়া নিয়ে আমরা কত হা হুতাস কাঁন্না আইডিয়া দিয়েছি কেউ কি শুনতে পেয়েছে? সে সময় আছে উন্নয়নওয়ালাদের হাতে? এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা কি আছে? ৫/১০ ঘন্টায় দেশের ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে পারে না?? মানুষ পুরে আঙ্গার হওয়ার চেয়ে ব্যর্থ দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘাতকদের বের করে দেওয়া ভাল নয় কি? এসব জায়গায় ব্যর্থ লোকদের রেখে কার লাভ? এ যাবৎ ফায়ারের একজনেরও কোন বিচার হয়েছে?
এমন অনেক জায়গায় এমনও ঘটনা ঘটেছে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়েছে, পরে ফায়ারের লোকেরা এসে ফটোসেশন মিডিয়া ইন্টার ভিউ করেছে। সব জায়গায় ফেইক সেশন চলে না প্লিজ ফায়ার ইউনিটটা সেনাবাহিনী অথবা বেসরকারী খাতে দিয়ে দেন। দেখবেন অটো আগুন দূর্ঘটনা ৮০% কমে যাবে।
২. রাস্ট্র সব পারে। হাইরাইজ ব্লিডিং গুলোতে এক্সিড সিড়ি, পাওয়ার ফুল অগ্নি নির্বাপক ব্যাবস্থা বাধ্যতামূলক করা হোক। কাল থেকে শুরু হোক ফায়ার হাইড্রেড নির্মাণ কাজ।
৩. লোকগুলো নিচে দাঁড়িয়ে ছিল ফায়ারের অপদার্থ লোকদের অপেক্ষায় না থেকে নীচে বড় চাদর ধরলেও হয়ত কিছু মানুষ প্রাণে রক্ষা পেত।
৪. কোন প্রকার তদন্ত কমিটির নামে ঢিলেমী আরেকটা ইস্যু তৈরী করে অাগুনে পোড়া মানুষগুলোর সাথে বেঈমানী না করে, তাদের প্রতি সামান্য সন্মান প্রদর্শন করে হলেও আগামী কাল থেকে ফায়ারকে শক্তিশালী একটিভ করার কার্যকর বাজেট ব্যবস্থাপনা নেওয়া হোক।
৫. হাজার কোটি টাকার ম্যাগা প্রজেক্ট এর চেয়ে মানুষের স্বাভাবিক মূত্যুর গ্যারান্টির জন্য মাত্র কয়েক কোটি টাকার কাজ করা হোক।
আমরা উন্নয়নের মহাসড়ক বুঝতে চাইনা। গ্যাস বিদ্যুৎ পানি বিল কমাও। সেবা সংগঠনকে পা চাটা গোলামদের হাতে ইজারা না দিয়ে স্ট্রং করো। আমাদের ভ্যাট ট্যাক্সের টাকায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা নিশ্চিৎ করো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন