আমরা পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে রয়েছি: সেনাপ্রধান
যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করে পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনা সদর দপ্তরে এক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারকে সেনাবাহিনীর সমর্থন, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক, সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের ক্ষমতার ভারাসাম্যসহ বেশ কিছু বিষয়ে সেনাপ্রধানের ভাবনার কথা উঠে এসেছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। এটাতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, সৈনিকদের যদি সাময়িক অসুবিধাও হয়, তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করে যাব। দেশ ও জাতির স্বার্থেই আমরা এটা করব। এই জাতির জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা তৈরি আছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাইছে, সেভাবেই সহায়তা দিচ্ছি এবং দেব। যে দিন অন্তর্বর্তী সরকার বলবে, “আপনাদের অনেক ধন্যবাদ, আপনারা আপনাদের কাজটা সম্পন্ন করেছেন, এখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নেবে।” আমরা তখন সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব।’
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরির গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভালো রাজনীতিবিদ রয়েছেন। হয়তো ভিন্নমতের মানুষও আছেন। আমার অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, যখন এমন একটা ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসলে তারা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন।’
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সমঝোতার ব্যাপারে আশা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন সমঝোতা সম্ভব। একসঙ্গে বসে এটা করা সম্ভব। এটা একটা সংস্কৃতির ব্যাপারও বটে। সবার এটা বোঝা উচিত। আমি নৈরাশ্যবাদী নই।’
রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদের বিকল্প রাজনীতিবিদেরাই। তাদের বিকল্প সেনাবাহিনী নয়।’
সেনাবাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন মাঠে থাকার ঝুঁকির প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলার দেখভাল করছি। কিন্তু আমাদের ১/১১–এর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সেনাসদস্যদের মাঠে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও সংখ্যাটা খুবই কম। শৃঙ্খলাজনিত ঘটনার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শেষে শাস্তিও দিই। এরপরও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের তো এ ধরনের কাজে যুক্ততা কিংবা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়নি।’
সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার ব্যাপারেও কথা বলেন সেনাপ্রধান। সশস্ত্রবাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখার ব্যাপারে নিজের মনোভাবের কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা দরকার।’
তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞ নই। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বুঝেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।’
আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি এ ব্যাপারে আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী প্রধান উপদেষ্টার অধীনে ছিল। আমি এই ধারণার কথা বলছি। ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রসঙ্গটি নিয়ে ভাবছি। কীভাবে সেটা হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা বললেই ভালো। কিন্তু এই পরিবর্তন আনতে পারলে শাসনব্যবস্থায় একটা ভারসাম্য আসবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন