আমরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত : মিয়ানমার

রোহিঙ্গাদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে রাজি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।

তিনি বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। যারা ‘দাদা, মা ও সন্তান’ এই তিনের অবস্থানের প্রমাণ দিতে পারবে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। একইভাবে যারা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) অনুযায়ী কাগজপত্র দেখাতে পারবে তাদেরও নাগরিকত্ব দেয়া হবে।

রোববার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মিন্ট থোয়ে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে দুইদিনের সফরে আসে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। শনিবার ও রোববার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ রোহিঙ্গা নেতাদের একাধিক বৈঠক করে তারা।

পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে আরও বলেন, দুইদিন ধরে একাধিক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের প্রস্তুতি সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন দফায় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দাবিসমূহ জানা গেছে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তা আবার হবে। একই সঙ্গে আসিয়ানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে। আসিয়ানের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বিবেচনা করা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া উভয়পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বৈঠক হবে ঢাকায়।

রোববার সকালে ক্যাম্প-৪ এ মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে ১০ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। রোহিঙ্গাদের পক্ষে মাস্টার মুহিব উল্লাহর নেতৃত্বে ৩০ সদস্য মিয়ানমার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত হন। তাদের মাঝে পাঁচজন নারী সদস্যও ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আসিয়ানের পাঁচ প্রতিনিধিও। পরে চার খ্রিষ্টান ও ১০ হিন্দু রোহিঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রতিনিধি দল।

বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে স্বদেশ প্রত্যাবাসন বিষয়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. মুহিব উল্লাহ।

টানা দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিজেদের নানা দাবির কথা জানান রোহিঙ্গারা। মুহিবুল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গা বাঙালি নই। নাগরিকত্ব, স্বাধীন চলা-ফেরার নিরাপত্তা প্রদান করলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবেন। মা-বোনদের নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচারও চান রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের কথা শোনে এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানান। ফেরত গেলে তাদের দাবি বিবেচনা করবে বলেও আশ্বাস দেন প্রতিনিধিরা।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শনিবার কক্সবাজার পৌঁছায়। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং রোহিঙ্গাদের ৪০ জনের একটি দলের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনা করে তারা।