‘আমি আত্মহত্যা করিনি, আমায় হত্যা করা হয়েছে’
বগুড়ায় নবম শ্রেণির ছাত্র রায়হান রাব্বী তাসিনের (১৫) লাশ শুক্রবার তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। তবে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে শহরের নিশিন্দারা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল ও কলেজের ৫ম তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে তাসিন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার ৪ ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সোয়া ৬টা ২২ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
তাসিন একই স্কুলের নবম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিল। সে শহরের নিউমার্কেটের প্রসাধনী ব্যবসায়ী এবং শিববাটি এলাকার বাসিন্দা সোহাগ হোসেন প্রামাণিক জুয়েলের ছেলে।
পুলিশ ও শিক্ষকরা মেধাবী এই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। তবে স্বজনরা বলছেন, প্রেমঘটিত কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।
এদিকে তাসিন স্কুলে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে ইংরেজিতে লিখেছে, ‘থ্যাংকস টু আল্লাহ, ফর গিভিং মি অ্যা লাইফ অব ফুল পেইন… বাই, এভরিওয়ান।’ আর প্রোফাইল পিকচারের স্থানে লেখা, ‘আমি আত্মহত্যা করিনি, আমায় হত্যা করা হয়েছে।’
তাসিনের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান, তাসিন প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও স্কুলে এসেছিল। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি চলার কারণে দুপুর ২টার দিকে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। এরপর সবার অগোচরে কোনো এক সময় তাসিন স্কুলের পশ্চিম পাশের নতুন পাঁচতলা ভবনের ছাদে ওঠে। বেলা আড়াইটার দিকে সে পাঁচতলা ভবন থেকে লাফ দেয়। শব্দ শুনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।
তিনি আরও বলেন, তাসিন ভালো ছাত্র ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।’ নবম শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিল।
শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নির্মলেন্দু গুণ জানান, তাসিনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
আইসিইউ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. নাঈম আহম্মেদ দিপু জানান, তাসিনের কোমর ভেঙে গিয়েছিল। এছাড়াও তার মাথাসহ শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর জখম হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিববাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে তাসিনদের বাড়িতে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বারিক খান নামে এলাকাবাসীদের একজন জানান, স্কুলভবন থেকে তাসিনের লাফিয়ে পড়ার খবরে তার স্বজনরা সবাই হাসপাতালে ছুটে গেছেন।
এলাকাবাসী জানান, তাসিন সব সময় একা একা থাকতো। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতো না। তাসিনের বাবা সোহাগ প্রামাণিক জুয়েলের চাচাত ভাই হেলাল প্রামাণিক জানান, তার ভাই সোহাগের নিউ মার্কেটে কসমেটিকের দোকান রয়েছে। সোহাগের সঙ্গে প্রায় ১৭ বছর আগে একই এলাকার বজলার রহমানের মেয়ে নিপা বেগমের বিয়ে হয়। তাসিন তাদেরই সন্তান। কিন্তু তাসিনের জন্মের দুই বছরের মাথায় তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তাসিন তার দাদা জয়নাল প্রামাণিকের কাছে বড় হতে থাকে। পরে সোহাগ আরেক নারীকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে তাদের পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাসিনের চাচা হেলাল প্রামাণিক আরও জানান, তাসিনের সঙ্গে তার সৎ মায়ের কোনো ঝামেলা ছিল না। তবে তার সঙ্গে দশম শ্রেণির এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। শুনেছি ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে সেই মেয়ে তাসিনকে প্রত্যাখান করে। এরপর সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে।
বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি পারিবারিক অশান্তির কারণে ছেলেটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। অন্য কারণও থাকতে পারে। বিষযটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন