‘আমি বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক এটা ভাবতেই ভালো লাগে’
রেললাইন বহে সমান্তরালÑ রেলপথ সমান্তরাল হলেও আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্রে সমান্তরাল নয়। অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে হয় নারীদের। বর্তমানে রেলে ১৪ জন নারী সহকারী লোকোমাস্টার (সহকারী ট্রেনচালক) হিসেবে কর্মরত। লোকমাস্টার (পূর্ণাঙ্গ ট্রেনচালক) হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন একজন। তিনি সালমা খাতুন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র নারী সহকারী ট্রেনচালক হিসেবে ২০০৪ সালের ৮ মার্চ রেলওয়েতে যোগদান করেন সালমা খাতুন। নিয়োগের প্রথম দুই বছর চট্টগ্রামের প্রশিক্ষণ একাডেমি, পাহাড়তলী, ঢাকা লোকোমোটিভ শেডসহ বিভিন্ন ওয়ার্কশপে হাতে-কলমে শিক্ষা নেন। সালমা বলেন, ‘একজন সহকারী ট্রেনচালককে পূর্ণাঙ্গ চালক হতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগে। কারণ শুধু ট্রেন চালানোই নয়, আমাদের শিখতে হয় যান্ত্রিক ও কারিগরি অনেক বিষয়ও। বর্তমানে আমি ঢাকা বিভাগে ট্রেন চালাচ্ছি। এখনো আন্তঃনগর ট্রেন চালাইনি। আর মাত্র এক বছর পরই আন্তঃনগর ট্রেন চালাতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৩ সালের আমি যখন সহকারী ট্রেনচালক পদে পরীক্ষা দিই, তখন রাজশাহী জোনাল অফিসে টাঙ্গাইল জেলা থেকে ১৩৪ জন পুরুষ পরীক্ষার্থী থাকলেও ঢাকার ১৭টি জেলা মিলিয়ে সে সময় নারী আবদেনকারী ছিলেন মাত্র দুজন। মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা শেষে ২০০৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হাতে পাই নিয়োগপত্র। এরপর দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা লোকোমোটিভ বিভাগে যোগ দিই। এরপর থেকেই চালকের সঙ্গে ট্রেন চালাচ্ছি।’ সালমা প্রথম ট্রেন চালান ২০০৬ সালে। এ কাজ করতে গিয়ে সালমাকে অনেক স্থানে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছে। ২০০৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী থেকে ফিরছিলেন। জানাজানি হয় ট্রেনে নারী চালক রয়েছে। সোনাইমুড়ী স্টেশনে আসতেই লোকজন ভিড় করে হইচই করে। সালমা ট্রেন থামিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে সবাই শান্ত হয়।
পেশাটির চ্যালেঞ্জিং দিকগুলো সম্পর্কে সালমা বলেন, ‘এটা এমন এক পেশা, যেটা মূলত পরুষদের জন্যই ধরা হয়। এ পেশায় মেয়েদের কাজের পরিবেশ এখনো যথাযথ নয়। নারী ট্রেনচালকদের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা কম। এমনকি যারা আমার সঙ্গে কাজ করে, তারাও বলে তুমি কি এটা পারবা? অথচ তারা দেখছে আমি দিব্যি করে যাচ্ছি, তার পরও বলে। প্রায়ই ট্রেনে ইট নিক্ষেপ ও চোরাকারবারিদের ত্রাসের সম্মুখীন হতে হয়। অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, অনেকেই আবার বিস্মিত হয়, কেউ হয় মুগ্ধ। কাজের পরিবেশ এখনো পুরোপুরি তৈরি না হলেও এ পেশায় নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কাজের পরিবেশ যথাযথ হবে বলে আশা করি।’ উচ্চশিক্ষিত সালমা কেন এ পেশা বেছে নিলেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং পেশায় যেতে চেয়েছিলাম। এ পেশাটির মাধ্যমে নতুন একটি ধারা শুরু করতে পারবÑ এটাও একটি কারণ ছিল। আমি বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক, এটা ভাবতেই ভালো লাগে।’
টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুরের অর্জনা গ্রামের মেয়ে সালমা খাতুন অর্জনা মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি ও ২০০২ সালে কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছেন সালমা। কৃষক বাবা বেলায়েত হোসেন ও গৃহিণী মা তাহেরা খাতুনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সালমা চতুর্থ। এক কন্যাসন্তানের জননী সালমার ২০১১ সালে বিয়ে করেন ঢাকা জজকোর্টে কর্মরত হাফিজ উদ্দিনকে।-আমাদের সময়
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন