আমের ওজন সাড়ে ৪ কেজি!
দেশি আম যখন প্রায় শেষ সে সময়ই আষাঢ়ের পরে শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে গিয়ে উঠবে মাগুরার আতিয়ারের ব্রুনাই কিং জাতের চার সাড়ে চার কেজি ওজনের আম। বৃহদাকার এবং অধিক ওজনের পাশাপাশি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় সাধারণ মানুষের কাছে ইতোমধ্যেই এই জাতের আম বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
জেলার শালিখা উপজেলার শতখালি গ্রামের আতিয়ার মোল্লা তার নার্সারিতে চাষ করেছেন ব্রুনাই কিং জাতের আমের গাছ। এই জাতের গাছের উচ্চতা নয় ফুটের বেশি নয়। কিন্তু সেই গাছে থরে থরে ধরে রয়েছে বিশেষ জাতের আম। যার প্রতিটির বর্তমান ওজনই কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন কেজি। শ্রাবণ মাসের শেষে তখন প্রতিটি আমের ওজন হবে সাড়ে চার কেজি বলে জানান কৃষক আতিয়ার রহমান।
খবর নিয়ে জানা যায়, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আতিয়ার রহমান নার্সারি ব্যবসা করে আসছেন। বর্তমানে তার ৭ বিঘা জমিতে রয়েছে নার্সারিসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান। ব্যবসার শুরু থেকেই তিনি দেশী-বিদেশী নতুন নতুন জাতের ফুল ও ফলের চারা সংগ্রহ করে তার নার্সারি সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ বছর আগে তিনি ’ব্রুনাই কিং’ নামের বিশাল আকৃতির আমের এ জাতটি সংগ্রহ করেন।
বছর চারেক আগে ইউসুফ আলি নামে তার এক ভাগ্নে ব্রুনাই রাজ পরিবারে বাগান পরিচর্যার কাজে যোগ দেন। তার কাছেই ব্রুনাই আমের গুনাগুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারেন এবং উত্সাহ দেখান। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার ওই ভাগ্নের মাধ্যমেই সেখান থেকে মূল গাছের ডাল সংগ্রহ করে মূল গাছের কলম তৈরি করেন।
আতিয়ার জানান, কলম ডালটি স্থানীয় একটি ফজলী আমের চারার সাথে তিনি ক্লিফটিং (কলম) করেন। যা থেকে তৈরী গাছে দুই বছরের মধ্যেই ৬টি আম ধরে সেগুলোর প্রতিটির ওজন হয় ২ কেজি। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে ৪ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজনের ১১টি আম ধরে। যা জানাজানি হওয়ার পর এ আম নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। এ আমের চারা সংগ্রহ করার জন্য একের পর এক ফোন আসার পাশাপাশি দূর দুরান্তের জেলা থেকে মানুষ তার নার্সারিতে আসতে থাকেন। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান থেকেও মানুষ এসে আমের চারা নিয়ে গেছেন।
তিনি আরো জানান, শুধু সাধারণ মানুষ নয় মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার ও ঢাকা থেকে কৃষি বিভাগের বড়-বড় কর্মকর্তারা তার নার্সারিতে ছুটে আসেন চারা সংগ্রহ করতে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর টেবিলে পর্যন্ত তার গাছের আম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
প্রথমবারের মত গত বছর তিনি প্রতিটি এক হাজার টাকা দরে কিছু আমের চারা বিক্রি করেছেন। যা থেকে আতিয়ার রহমান দুই লাখ টাকা আয় করেছেন। এ বছর তিনি ৫০০ চারা তৈরী করেছেন বলেও জানান তিনি।
আতিয়ার রহমান আরো বলেন, এ আম শুধু আকৃতিতেই বড় নয়, অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। কাঁচা আম খেতে পেঁপের মতো। সাথে টক, মিষ্টি স্বাদ। আর পাকা ব্রুনাই কিং-এর স্বাদ দেশী আম ‘মল্লিকা’-র স্বাদের মতোই। এই জাতের আমের আঁটি (বিচি) একদম ছোট হওয়ায় এক একটি আম থেকে প্রায় সাড়ে তিন কেজির উপরে জুস (রস) পাওয়া যায়। এছাড়া এই জাতের আম একটু দেরিতে অর্থাৎ শ্রাবণ মাসে পাকার কারণে এগুলোর দামও পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশী।
মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববীদ আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি শালিখার শতখালী গ্রামের আতিয়ার রহমানের কাছ থেকে কলম নিয়ে হর্টিকালচার সেন্টারে লাগিয়েছেন। নতুন গাছে গত বছর ৪-৫টি আম ধরেছিলো যেগুলোর গড় ওজন ছিল সাড়ে ৪ কেজি। এ বছরও বেশ কিছু আম ধরেছে।
তারা কলমের মাধ্যমে এ বছর কিছু চারা বানিয়েছেন। এ আম দেখতে ও চারা কিনতে মাগুরা হর্টিলচার সেন্টারে যেভাবে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন তাতে তারা রীতিমত অবাক বলেও জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন