আরো তিন মামলায় গ্রেপ্তার কারাবন্দি খালেদা জিয়া
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আরো তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কারা-মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন এই তথ্য জানিয়েছেন।
আইজি প্রিজন জানান, খালেদা জিয়াকে কুমিল্লা এবং ঢাকার তেজগাঁও ও শাহবাগ থানার তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
যে তিনটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তার মধ্যে একটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলা। চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার সংলগ্ন জগমোহনপুর এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের মামলায় গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানতে পেরেছেন তাঁর আইনজীবীরা। এজন্য তাঁরা জামিনের আবেদন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্য আর কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা তাঁরা জানেন না।
এদিকে কুমিল্লার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ব্যাপারে ঢাকার গুলশান থানার পুলিশ কিছু জানে না বলে দাবি করেছে। ঢাকার আদালতের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে আজ ঢাকা কোর্টে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, কুমিল্লার নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়াকে রেকর্ড শ্যেন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। আরো মামলার কথা তিনি শুনেছেন। তবে নিশ্চিত করতে পারেননি।
এর আগে কুমিল্লার কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ২ জানুয়ারি আদালতের আদেশের পরপর তাঁরা ওই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঢাকার গুলশান থানা পুলিশের কাছে পাঠান।
একই তথ্য জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিআই-১) পরিদর্শক মো. মাহবুব মোর্শেদ।
গুলশান থানা পুলিশ সোমবার ওই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মো. কাইমুল হক রিংকু। তিনি জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। ওই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁরা কুমিল্লার আদালতে জামিনের আবেদন করবেন। এজন্য জামিনের পক্ষে খালেদা জিয়ার ওকালতনামা আনতে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে আইনজীবীদের পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে ওকালতনামা এলে তাঁরা কালকে কুমিল্লার আদালতে জামিনের আবেদন করবেন।
যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার প্রবেশনাধীন উপপরিদর্শক (পিএসআই) আনোয়ার হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত কোনো কাগজ তাঁরা পাননি।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, গুলশান থানা পুলিশ খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখায়নি। এটা সংশ্লিষ্ট আদালতের বিষয় বলে জানান তিনি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সাজা ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। রায় ঘোষণার তিনদিন পর গতকাল রোববার থেকে আদালতের নির্দেশে তাঁকে ডিভিশন বা প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে এরপর গত শুক্রবার বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ করে দলের নেতাকর্মীরা। এর পরদিন গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রোববার ২০ দলের জোটের সভায়ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।আজ থেকে তিনদিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
শেষের দিন আগামী বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন