আর্জেন্টিনার স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ শেষে হাসপাতালে ম্যারাডোনা
আর্জেন্টাইন ফুটবল যদি হয় আবেগর অপর নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা তাহলে সেই আবেগের চূড়ামণি। খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন ছিলেন বুট তুলে রাখার পরও ঠিক তেমনই আছেন। আজও আর্জেন্টিনার ম্যাচ মানেই ম্যারাডোনার আবেগের নিখাদ ও চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। সেন্ট পিটার্সবার্গে আজ আর্জেন্টিনার বাঁচামরার ম্যাচে তাঁকে ঠিক সেভাবেই দেখা গেছে। তবে এতটা বোধ হয় কেউ আশা করেনি। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ শেষে যে কিংবদন্তিকে যেতে হয়েছে হাসপাতালে!
এই ম্যাচে মেসিদের ওপর পাহাড়সমান চাপ ছিল। ম্যারাডোনা যেন মাঠের বাইরে থেকেও সেই চাপের ভাগটুকু নিয়েছেন! ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তি শুধু মাঠেই নামতে পারেননি তা ছাড়া কোথায় ছিলেন না! মাঠে মেসিদের ভালো খেলায় যেমন উদ্বেলিত হয়েছেন তেমনি গোল হজমের পর হতাশায় মুষড়েও পড়েছেন। প্রথমার্ধে তো একবার ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। তাঁর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ম্যারাডোনার শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছে না।
বিরতির সময় ভিআইপি গ্যালারিতে উঠেছেন অন্যের সাহায্য নিয়ে। ম্যাচ শেষে ভিআইপি গ্যালারিও ছেড়েছেন অন্যের সাহায্যে। এ সময় স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি চেয়ারের ওপর পরেও গিয়েছিলেন। তৎক্ষণাৎ মাঠের প্যারামেডিকেল কর্মীরা ম্যারাডোনার রক্তচাপ মাপার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তবে ম্যারাডোনাকে ঠিক কী কারণে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ এক সূত্র মারফত জানিয়েছেন, ম্যারাডোনা আপাতত সুস্থ আছেন।
ম্যাচ শুরুর আগে মনটা ভালো করতেই কি না কে জানে, ভিআইপি গ্যালারিতে এক চোট নেচে নিয়েছেন এক নারী সমর্থকের সঙ্গে। যেহেতু বাঁচামরার লড়াই—মেসিদের প্রেরণা জোগাতে বোধ হয় ম্যাচ শুরুর আগে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের একটি ছবি দেখান ম্যারাডোনা। একটি কাপড়ের ওপর অনেকটা করজোড়ের ভঙ্গিতে সেই ছবিতে ম্যারাডোনা যেন মেসিদের বলতে চাইছেন, আর্জেন্টিনাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো!
ম্যারাডোনার সেই প্রতীকী ডাকে সবার আগে সাড়া দিয়েছেন তাঁর সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসূরি মেসি। ১৪ মিনিটে গোল করে। উত্তরসূরির গোলে তাঁর পূর্বসূরির উল্লাসটা ছিল দেখার মতো। বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা আবেগের লাভা স্রোত ম্যারাডোনা যেন দু হাত উঁচিয়ে উগরে দিলেন! বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে বলতে দু হাত দিয়ে ক্রস এঁকেছেন বুকে। যেন ধন্যবাদ জানালেন ঈশ্বরকে। আর রোহোর জয়সূচক গোলের পর তাঁর উদযাপন তো একই সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বিতর্কও ছড়িয়েছে।
গোলটা হতেই চেয়ার ছেড়ে গ্যালারির কাচের রেলিংয়ের পাশে এসে দু হাতের মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন ম্যারাডোনা। ফিফা আয়োজক কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যামেরাগুলো তৎক্ষণাৎ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিবিসির উপস্থাপক ও ইংল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার বলেছেন, ‘ম্যারাডোনার এই উদযাপন সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হবে’ এবং সেটাই ঘটেছে। তবে তাঁর হাসপাতালে যাওয়ার খবরটা আর্জেন্টিনা সমর্থকদের যে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন