আর্টিজানে হামলা: প্রতিবেদন দাখিল হয়নি দুই বছরেও
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় করা মামলার দুই বছর পূর্তি হলেও এখনও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। পুলিশ বলছে, এই মামলার তদন্ত অনেকটাই গুটিয়ে আনা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) খুব শিগগিরই তা আদালতে দাখিল করবে।
গত ২৮ জুন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত। শিগগিরই তা আদালতে দাখিল করবে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
ডিএমপির কমিশনার আরও বলেছিলেন, এদের মধ্যে হামলায় অংশগ্রহণকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ১৩ জন নিহত হয়েছে। বাকি নয়জনের মধ্যে সাতজন কারাগারে ও দুজন পলাতক রয়েছে। তবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হাসনাত করিমকে মামলার চার্জশিটে আসামি করা হবে কি না- সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হাসনাত রেজা করিম এখনো কারাগারে আছেন।
গত বছরের ১ জুলাই শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সর্ববৃহৎ এ ঘটনাটি ঘটে। রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় সে সময় পাঁচ জঙ্গির একটি দুর্ধর্ষ দল অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে এবং রাতভর চালায় হত্যাযজ্ঞ।
পরদিন শনিবার সকালে রেস্তোরাঁয় জিম্মিদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’শুরু করে যৌথ বাহিনী। তবে এর আগে শুক্রবার রাতেই জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন।
অভিযান শেষে যৌথ বাহিনী বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। ভেতরে পাওয়া যায় ২০ জনের মরদেহ। তাদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, নয়জন ইতালিয়ান, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে হামলার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, প্রশিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম এবং অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত তানভীর কাদেরী নিহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে।
এছাড়া মামলাটিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদেরকে দুই দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে অবশ্য তাহমিদকে গুলশান মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশকে অসহযোগিতার মামলা দেয় পুলিশ। সে মামলায় তাহমিদ ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে খালাস পান।
এ মামলায় বর্তমানে ছয় আসামি কারাগারে আটক রয়েছেন। তারা হলেন- কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, হাদীসুর রহমান সাগর, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ ও মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।
মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কয়েক দফা সময় পেছানো হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জুন অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তা না দেওয়ায় আগামী ২৬ জুলাই পুলিশকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। বর্তমানে পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট মামলাটির তদন্ত করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন