আশ্বাসের প্রভাব নেই বাজারে, পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কাজ করার আশ্বাস দেয়া হলেও তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি বাজারে। বরাবরের মতো এবারও রমজান শুরুর আগেই দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও মালিবাগসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচা সবজির। গত কয়েকদিনের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া দাম বেড়েছে মুরগি, চিনি, আদা, রসুন ও ছোলার।

ব্যবসায়িরা বলছেন, পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। পাইকারি পর্যায়ে দাম বেশি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

কিন্তু ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়িরা দাম বাড়িয়ে অহেতুক কোনো না কোনো অভিযোগ দাঁড় করায়। মূলত রমজানকে টার্গেট করেই তারা দাম বাড়ায়।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে ক্রেতা মনিরুল বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। রমজান উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িরা ইচ্ছা করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সোহেল বলেন: ‘ট্রাক ভাড়া বেশি, পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। রাস্তায় জ্যাম থাকায় অনেক মালামাল নষ্ট হয়। সেজন্য দাম বাড়ছে।সরকারও তো আর মাল বিক্রয় করে না। তারা বাজারের বাস্তব অবস্থা বুঝে না। এসির মধ্যে বসে থেকে দর নির্ধারণ করলে তো হবে না।’

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ভারতে পেঁয়াজ-রসুনের দাম বাড়ছে, তাছাড়া রমজানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই দাম বাড়ছে।’

সবজিতে আগুন:
কয়দিন আগেও বেগুন, টমেটো বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। কিন্তু এখন প্রতি কেজি বেগুন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা আর টমেটো ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ:
গত মাসে ভারতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৬ রুপি; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ টাকা। এখনও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমদানি ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বাংলাদেশে দেশীয় পেঁয়াজের সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের দরও বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গত ১০ থেকে ১৫ দিন আগেও দেশি পেঁয়াজের দর ছিল কেজি প্রতি ৩০ টাকা। এখন ৫০ থেকো ৫৫ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা যা এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টনের মত। কিন্তু উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টন।

তেজ বেড়েছে রসুন-আদার:
খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে; যা কয়দিন আগেও ছিল ১০০ টাকা। আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা টাকা। কেজিপ্রতি আদার দর বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। প্রতি কেজি চীনা আদা ১২০ ও দেশি আদা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ছোলার দামও বেশি:
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত এক মাসে ছোলার দাম প্রায় ১১ শতাংশ কমে টনপ্রতি ৫৬৭ ডলারে নেমেছে। তবে বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। কয়দিন আগের গড়ে ৬০ টাকার ছোলা মানভেদে এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

গত কয়েক মাস চিনির দাম ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায় ঘুরাঘুরি করলেও এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকায়।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন: বৃষ্টি, রাস্তার জ্যাম ও চাঁদাবাজি এবং বাজারে এক সাথে সব ক্রেতাদের চাপের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ি এই সুযোগ নিচ্ছে।’

এ জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ক্রেতাদের এক সাথে অনেক পণ্য না কিনে ধাপে ধাপে কিনতে হবে। তাহলে দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

রমজানে নিত্য পণ্যের দাম বাড়বে না বলে বার বার আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রমজানে চাহিদার তুলনায় পণ্যের মজুদ অনেক বেশি রয়েছে। সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। তাই নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট হবে না, দামও বাড়বে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেছিলেন, রমজানে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, ডাল ও সুজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না। তবুও কেউ বাড়তি দাম নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।