আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে যা বলছে বিশ্ব মিডিয়া

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবর ও মন্তব্য প্রকাশ করেছে। এবারের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আগ্রহ অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ে তুলনামূলক কম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমনটি বলা হয়েছে।

দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট: যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট কয়েক দিন আগে নির্বাচন নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এক ধরনের ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বাংলাদেশের এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন এশিয়া এডিটর এডাম উইথনাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের দিকে ঝুঁকেছে এবং কঠোরভাবে বিরোধীদের দমন করেছে। আবার বাংলাদেশ তার অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পুরো অঞ্চলে সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

তার মতে, যদি শেখ হাসিনা ভোটে জেতেন, যেটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে কিছু বিক্ষোভ হবে এবং সেগুলো দমন করা হবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে ভারতীয় সাংবাদিক মানস ঘোষ ‘ব্যাটল ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে লেখায় বলেছেন, এই নির্বাচন গত এক দশক ধরে শেখ হাসিনা যেসব নীতি এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন, সেগুলোর জন্য এক লিটমাস টেস্ট।

তার মতে, “শেখ হাসিনার এসব কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাবই পড়া উচিত নির্বাচনে, কিন্তু ‘এন্টি ইনকামবেন্সি’, অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, বিশেষ করে তার দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বেলায় তার বিরোধী পক্ষ বিএনপির ভাবমূর্তি আরও বেশি খারাপ।”

নিকেই এশিয়ান রিভিউ: জাপানের এই গণমাধ্যমটি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি কভারেজ দিয়েছে।

নিকেই এশিয়ান রিভিউয়ে গত সপ্তাহের ‘দি রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রচ্ছদ করে। তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটছে বলে উল্লেখ করা হয়, কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলা হয়, শেখ হাসিনা কি এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন?

দ্য মিন্ট: ভারতের দ্য মিন্টে লন্ডনভিত্তিক লেখক সলিল ত্রিপাঠির একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে।

সলিল ত্রিপাঠি লিখেছেন, একমাত্র জ্যোতিষী আর জরিপকারীরাই নির্বাচনের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং প্রায়শই তারা ভুল প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে বসে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আমার কাজ নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরে না আসে, সেটা বেশ অবাক করা ব্যাপার হবে।

তিনি বলেন, বাস্তবে আজকের আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাপূর্ব কালের আওয়ামী লীগের মিল খুব সামান্য এবং আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দেখতে অনেকটা ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকের বাকশালের চেহারা নিয়েছে। যখন কিনা একদলীয় রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমে সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়েছিল, অন্যান্য দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল উচ্ছৃঙ্খল তরুণদের পেশিশক্তিনির্ভর একটি দল।

দ্য স্ক্রল: দ্য স্ক্রল একটি ভারতীয় গণমাধ্যম। ফাহাম আবদুস সালাম নামে একজন বিশ্লেষক এই গণমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটি একটি ”ম্যানেজড ইলেকশন” হতে যাচ্ছে কি না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গত সেপ্টেম্বরে লিখেছিলেন, যদি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরবর্তী পার্লামেন্টে লজ্জাজনকভাবে একটি সংখ্যালঘু দলে পরিণত হতে পারে। এই অনুমান মোটেই বিস্ময়কর নয়, কারণ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারাও নিজেদের সমর্থকদের কাছে এ রকম আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। এ থেকে যেটা বোঝা যায় তা হলো বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক মতের লোকজনই মোটামুটি একমত যে একটা ‘ম্যানেজড ইলেকশন’ ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জেতা অসম্ভব। আর এ ধরনের একটা ‘ম্যানেজড ইলেকশন’, যেটাই সম্ভবত ঘটতে যাচ্ছে, তা ভারতের সহযোগিতা ছাড়া ‘ম্যানেজ’ করা সম্ভব নয়।