আসুন জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি যেখানে কারো কোনো ভয় নেই। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সঙ্গে আমরা অন্যের কথা শোনবার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারতো না।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীনভাবে বলতে পারতাম না। বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলো দেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল।’

শনিবার ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরে ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে ঢাকায় নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল হত্যার বিচারের দাবিতে গণসমাবেশে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জনগন দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গনতন্ত্র ও দেশের উন্নয়নের জন্য নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সরকারের (অন্তর্বর্তী) প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে এখানে একটি কিন্তু রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরকেই নিতে হবে।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের এই মহা সময়ে দেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা, কৃষক, শ্রমিক ও সর্বস্তরের মানুষের অবদানকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনার গুম, খুন, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার জনতার অবদানকে যদি স্বীকৃতি দিতে না পারি, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।’

বিএনপির শীর্ষনেতা বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল ইসলাম মির্জা, দুলাল ও পলাশসহ বহু নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। ফ্যাসিষ্ট সরকার পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগষ্ট এই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারকে হটিয়েছে। জনগনের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগনের বুকের উপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগনের দাবি ছিলো দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শূন্যতা পুরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছরে এই জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের, ৭১ এর শহিদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে।’

‘আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সকলকিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হবে’ বলেন তারেক রহমান।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তারেক রহমান বলেন, ‘আসুন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।’

বিকাল ভার্চুয়ালি সমাবেশে যুক্ত হন বিএনপির ভারপপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ১১ মিনিটের বক্তব্যে আগামীর বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও জনমামনুষের আকাঙ্খার কথা তুলে ধরেন।

১৬ বছর পর এদিন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশ গনবিস্ফোরণে রুপ নেয়। জেলা শহরের প্রতিটি রাস্তায় রাস্তায়, পাড়া-মহল্লার অলিতে গলিতে মানুষের ঢল নামে।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আক্তরুজ্জামান আক্তার, মুন্সি কামাল আজাদ পাননু, আব্দুর মজিদ বিশ্বাস, সাজেদুর রহমান পপ্পু,শাহজাহন আলী, এ্যাড শামসুজ্জামান লাকী, আলমগীর হোসেন চেয়ারম্যান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।