আ.লীগের এমপির সঙ্গে ‘পুলিশ পেটানো’ শিবির কর্মী
সামনে সংসদ সদস্য। পেছনে পুলিশ। মাঝখানে পুলিশ পেটানো মামলার আসামি। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
তবে সামনে মনিরুল ইসলাম নামের ওই আসামি থাকলেও পুলিশ তাকে দেখতে ‘পায়নি’। এ নিয়ে রাজশাহীজুড়ে চলছে সমালোচনা।
নাশকতা এবং পুলিশ পেটানোর মামলার আসামি মনিরুলকে গত সোমবার রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে দেখা গেছে। মনিরুল ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্য। মনিরুল নিজেই তার ফেসবুক আইডিতে আয়েনের সঙ্গে কয়েকটি ছবি আপলোড করেছেন।
ফলে এ ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ায় চলছে তোলপাড়। তবে আয়েন উদ্দিন বলেছেন, তিনি মনিরুলকে চেনেনই না। আর সাবেক শিবির সদস্য কৌশলে এই কাজ করেছেন কি না, সেটি নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
সংসদ সদস্য আয়েন বলেন, ‘মনিরুলকে আমি চিনি না। সে আগে ছাত্রশিবির করত কি না- বা জামায়াত নেতা কাটাখালি পৌরসভার সাবেক মেয়র মাজেদুর রহমানের দেহরক্ষী ছিল কি না, তাও বলতে পারব না। সে পুলিশ পেটানো এবং নাশকতা মামলার আসামি কি না- তাও আমি জানি না।’
সোমবার এমপি আয়েন উদ্দিন এবং পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী কাটাখালি আদর্শ কলেজ, বালিকা বিদ্যালয় ও শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশ পেটানোর ঘটনায় করা তিন মামলাসহ হাফডজন মামলার আসামি মনিরুল।
ছবিতে সংসদ সদস্যের ডান পাশে মনিরুলকে দেখা যাচ্ছে। একটি ছবিতে মনিরুলের পিছনে একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। কিন্তু পুলিশের খাতায় মনিরুল পলাতক আসামি।
গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাটাখালি থানার খিদিরপুর মধ্যচর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। এ সময় ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী আক্কাস আলীকে ধরে ফেলে পুলিশ। তখন আক্কাসের সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা করে আক্কাসকে ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় অন্য পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও হামলায় এএসআই মাহাবুব ও কনস্টেবল সুজন গুরুতর আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় সেখানে অভিযান চালিয়ে ১১৬ বোতল ফেনসিডিল, দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, দুইটি হাঁসুয়া, দুইটি লোহার রড ও একটি লাঠি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নগর ডিবি পুলিশের এসআই মাহাবুব হাসান কাটাখালি থানায় তিনটি মামলা করেন। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা, মাদকদ্রব্য এবং অস্ত্র আইনে দায়েরকৃত এসব মামলায় ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৯৩ জনকে আসামি করা হয়। মামলা তিনটি তদন্ত করছেন কাটাখালি থানার এসআই শামিদুল্লাহ।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার ৩ নম্বর আসামি আলমগীর হোসেন আলো গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। মনিরুল ইসলাম তিনটি মামলার ১৩ নম্বর আসামি।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলা ছাড়াও মনিরুলের বিরুদ্ধে আর কোন মামলা আছে কি না- জানতে চাইলে কাটাখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা এবং মির্জাপুর ফাঁড়ির এএসআই কামারুজ্জামান কামরুলের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইসহ চারটি মামলার আসামি মনিরুল।
সংসদ সদস্য ও মেয়রের সঙ্গে পলাতক মনিরুলকে দেখা গেছে এবং সেখানে পুলিশও ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি নিবারণ চন্দ্র বলেন, ‘মনিরুল এমপির অনুষ্ঠানে ছিল কি না- তা পুলিশের চোখে পড়েনি। চোখে পড়লে অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। কারণ সে পুলিশের ওপর হামলা মামলার পলাতক আসামি।’
ওসি জানান, মনিরুলের বিরুদ্ধে থাকা নাশকতার মামলাগুলো বিচারাধীন। তিনি জামিনে। এছাড়াও চলতি বছরের ২৯ মার্চ মনিরুলের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়। সে মামলাতেও মনিরুল জামিনে। এসব মামলায় তার জামিনের আদেশ থানায় রয়েছে। তবে পুলিশ পেটানো মামলায় তার জামিন নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় ছাত্রশিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মনিরুল কাটাখালি পৌরসভার জামায়াতের সাবেক মেয়র মাজেদুর রহমানের দেহরক্ষী ছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী কাটাখালি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে মনিরুলকে মেয়র আব্বাসের অনুসারী হিসাবেই এলাকাবাসী জানেন।
এছাড়াও মনিরুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা মাদক ব্যবসায় জড়িত এবং একাধিক মাদক মামলার আসামি। মনিরুলের ছোটভাই আসলাম মাদক ও অস্ত্র মামলায় রাজশাহী কারাগারে রয়েছেন। মনিরুলের বড় ভাই মৃত আনারুলের স্ত্রী চম্পা, মেয়ে রিমা ও রুমা মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার হয়। এদের মধ্যে চম্পা ও রিমা জামিনে বের হলেও রুমা এখানো কারাগারে আছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজশাহীর পবা উপজেলার পিল্লাপগা এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশা চালক আবদুল মান্নানকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক। ওই সময় তিনি পুলিশের কাছে পলাতক ছিলেন। কিন্তু ওই বছরেরই ৮ ডিসেম্বর আজিজুলের সঙ্গে এমপি আয়েন উদ্দিনের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন