‘আ.লীগের তৃণমূল সঠিক, উঁচু মহলে উল্টাপাল্টা’
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2017/07/PM-Hasina-6-20170724184643.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি গুণ আছে, এই দলের তৃণমূল সব সময় সঠিক থাকে, কিন্তু উঁচু মহলে উল্টাপাল্টা হয়।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা আন্দোলন ঘোষণা করে কারাগারে গেলেন তখন আট দফা নাকি ছয় দফা এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দ্বিমত করেছিলেন। আমি এখন তাদের নাম বলতে চাই না। কিন্তু আমার মা ছিলেন ছয় দফার পক্ষে। তিনি এ ব্যাপারে অটল থাকেন। এজন্য কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসেনি।’
বৃহস্পতিবার শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মরণে এক আলোচনা সভা তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে সময় আমিও অনেক নেতার সঙ্গে তর্ক করেছি। আমাদের ধানমন্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে তর্ক করতে করতে অনেক সময় মিরপুর রোড পর্যন্ত চলে যেতাম। কিন্তু তারা বলতেন, তুমি ছোট মানুষ, তুমি এসব বুঝবে না।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলো জামিন দিতে চেয়েছিল, তাকে নেয়ার জন্য বিমানও প্রস্তুত ছিল। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা অনেকেই এর পক্ষে ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে বোঝানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিনীর পরামর্শে তাতে সম্মত হননি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নেতারা বঙ্গবন্ধুকে বোঝাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে আসেন। তারা এসে সবচেয়ে জঘন্য কথাটি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে জামিনের অনুমতি না দিলে আপনাকে বিধবা হতে হবে। কিন্তু আমার মা তাদেরকে বলেছিলেন, বন্দী আরও অনেকেই আছে, তাদের স্ত্রীদের কথাও তো চিন্তা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য কাজ করেন। তিনি সসম্মানে ফিরে আসবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ নিয়েও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ কেউ লিখিত পয়েন্ট দিয়েছেন। কিন্তু বাবাকে উদ্দেশ্য করে আমার মা বললেন, তোমার সামনে জনগণ, পেছনে ইয়াহইয়া খানের বন্দুক। কারও কথা শোনার দরকার নেই, তোমার মনে যে কথা আসে সেই কথা বলবা। কারও কথা শোনার দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণে তাই বলেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন তার সহধর্মিনী। স্বাধীনতার পেছনে বঙ্গমাতার অবদান অনেক। তাকে পাশে পেয়েছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা আনতে পেরেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আব্বা কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন এর জন্য কোনো অভিযোগ করেননি আম্মা। তিনি আব্বার প্রতিটি পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছেন। মায়ের মধ্যে কোনো হা-হুতাশ ছিল না। তার কোনো চাহিদা ছিল না। কোনো কিছু বলে বাবাকে তিনি বিরক্ত করেননি।’
দলের জন্য বঙ্গমাতার অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি দল থেকে, সরকার থেকে কোনো কিছু নেননি। বরং দলের প্রয়োজনে নিজের গহনাগাটি পর্যন্ত তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন।’ যেসব নেতা কারাগারে ছিলেন তাদের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গমাতা বাজারখরচ দিয়ে আসতেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গমাতা খুনি মোশতাকের বাসায়ও বাজারখরচ পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাক গাদ্দারি করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে দেখি অনেকে রাজনীতিবিদ হয় অর্থকড়ি কামাই করতে, সমাজে প্রতিপত্তি বিস্তার করতে। কিন্তু জাতির পিতার রাজনীতি ছিল দেশকে কী দেবেন, মানুষকে কী দেবেন, এই চিন্তাই তার ছিল। আমরা প্রায়ই দেখি মন্ত্রিত্ব পাওয়ার জন্য দল ত্যাগ করে, আর বঙ্গবন্ধু দলের জন্য মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছেন। যারা দেশের ও মানুষের জন্য রাজনীতি করতে চান তাদের জন্য এটা একটি বিশেষ শিক্ষা।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীকে শিক্ষিত হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘অশিক্ষিত নেতৃত্ব দায়িত্ব পেলে দেশের কী হতে পারে তা তো আমরা দেখেছি।’
ছাত্রলীগের সাবেক এই নেত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কাছে এলে মনে হয় মন খুলে কথা বলি। বলতে গেলে এটাই আমার মূল সংগঠন, যার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক।’ এ সময় তিনি ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়ে তার আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার পরামর্শ দেন।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন