আ.লীগে বেশিরভাগ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছে দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে কী ভাবা হচ্ছে তা উঠে এসেছে। জনপ্রিয়তা ও নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে সে যেই হোক মনোনয়ন পাবেন না। বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে।
জরিপ চালানো হচ্ছে বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এলাকার অবস্থান নিয়ে। জরিপের ফল অনুসারে বেশিরভাগ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন। আর দলীয় মনোনয়নে পরিবর্তনের যে আভাস কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে, তার ওপর ভরসা করেই বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি মাঠে নেমে পড়েছেন অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তারা এলাকায় সময় দিতে শুরু করেছেন। তারা যাচ্ছেন জনগণের দুয়ারে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবেক ছাত্র নেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও বসে নেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকামুখী হতে শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও এখন নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন। ভোটারদের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তারা। এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে টানছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সদ্য শেষ হওয়া রমজানে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমেও এলাকার মানুষ ও নেতাকর্মীদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসাবাড়ি ও কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন নিয়মিতভাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে ইতিমধ্যে বলেছেন, বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জনপ্রিয়তা প্রমাণে ব্যর্থ হলে সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন হারাবেন। এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যরা এগিয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন না, উইনেবল ক্যান্ডিডেট হবেন না, তারা মনোনয়ন পাবেন না। যারা উইনেবল ক্যান্ডিডেট হবেন, তারা মনোনয়ন পাবেন। যারা নেতার জন্য যোগ্য ও যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তারাই মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের মতো নির্বাচন এবার আর হবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এবার আর গতবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদের এ বার্তা দিয়ে হুশিয়ার করে দিয়েছেন। তাই যারা ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে কাজ করেছেন, দলীয় স্বার্থ উপেক্ষা করেছেন, তারা এবার সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন। পদপদবির অপপ্রয়োগ করেছেন এমন নেতারাও রয়েছেন ছিটকে পড়ার ভয়ে। কারণ নেত্রীর সবার আমলনামা তৈরি করে রেখেছেন। তিনি প্রতিনিয়ত সবার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। মাঠ জরিপে যাদেরই জয়ের সম্ভাবনা থাকবে, তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে। যাদের জয়ের সম্ভাবনা নেই এমন কেউ মনোনয়ন পাবেন না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, প্রতি নির্বাচনেই দলীয় মনোনয়নে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। এবারও তাই হবে। যারা এলাকায় জনপ্রিয় তারাই মনোনয়ন পাবেন। যাদের জনপ্রিয়তা নেই, তারা পাবেন না। এবারের মনোনয়নে অনেক নতুন মুখ দেখা যাবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রতিনিয়ত এলাকায় যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন। তারা নিয়মিত নেতাকর্মীদের সময় দিচ্ছেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ২১ জুন নিজ নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়ে বলেন, উন্নয়ন, ভালোবাসা ও মানুষের মন জয় করেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
এমপি নন কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এমন নেতারাও পিছিয়ে নেই। তারাও প্রতিনিয়ত এলাকায় যাচ্ছেন এবং নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষকে সময় দিচ্ছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সময় থেকেই এলাকার মানুষের কাছাকাছি থেকে আসছি। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখি, নিয়মিত যাই। আমাদের নড়িয়া ও সখীপুরের প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ রয়েছে। বিপদাপদে যে কোনো কাজে আমি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।
এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও সময় দিচ্ছেন এলাকায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির অংশ হওয়া পর্যন্ত এলাকার মানুষের পাশে থেকেই দল ও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতেও এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে থাকতে চাই। তাই সময়-সুযোগ হলেই তাদের কাছে ছুটে যাই। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের শক্তিই জনগণ। তাই যত বেশি জনগণ বেষ্টিত থাকা যায়, সেই চেষ্টা করি।
আওয়ামী লীগের সাবেক সহসম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির বলেন, ৮ বছর ধরে নিয়মিত এলাকায় সময় দিয়ে আসছি। আগে সপ্তাহে দুই-তিনবার যেতাম এখন ৫ দিন যাই। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। সেখানকার নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনগণের পাশে থেকে আমি কাজ করে যাচ্ছি।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, রিয়াজুল কবির কাওসার, সাখাওয়াত হোসেন শরিফ, মাহমুদ হাসান রিপন, এ এস এম মামুদ দুলাল, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, আবু হুসাইন বিপুসহ অনেকেই শক্ত প্রার্থী হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন