ইউক্রেন সুন্দরীকে নিয়ে গোয়েন্দাদের ঘুম হারাম

ইউক্রেনের মডেল দারিয়া মোলচা ঘুম কেড়েছেন ভারতের গোয়েন্দাকর্তাদের। ইউক্রেনিয়ান এই সুন্দরী তরুণী কোনো বিদেশি সংস্থার গুপ্তচর নাকি নিছক এসকর্ট তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।

চলতি মাসের শুরুর দিকে দারিয়াকে ভারতের উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দারিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইলে রাজ্যের এক পুলিশকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার তথ্য পায় গোয়েন্দারা।

দারিয়া সম্পর্কে অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা। সুন্দরী এই তরুণীর পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের যাতায়াতে তথ্য পেয়ে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অনুসন্ধান করছে ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলো। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

খবরে বলা হয়েছে, ভারতে আসার আগে দীর্ঘদিন চীনে কাটিয়েছিলেন ইউক্রেনের এই তরুণী দারিয়া মোলচা। আর চীন ভ্রমণই এখন সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে।

দারিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি মোবাইল আর আইপ্যাড ঘেঁটে গোয়েন্দারা একটি বিষয় নিশ্চিত, রাজ্য পুলিশের যে শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ছবি পাওয়া গিয়েছে সেই পুলিশকর্তার সঙ্গে তার যোগাযোগ আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে। তখন ভারতের একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তদন্তকারীরা ছাড়াও দারিয়াকে জেরা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাকে জেরা করে গোয়েন্দারা এখন নিশ্চিত যে দারিয়া নিছক এসকর্ট নয়। ষড়যন্ত্রের বীজ আরও গভীরে।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ওই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে একাধিক শীর্ষ আমলার ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন দারিয়া। আর সেটা শুধুমাত্র টাকার জন্য নয় বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা।

দারিয়ার আইপ্যাড এবং মোবাইলে দিল্লি পুলিশ এবং কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের অনেক প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত এক বছর ধরে দিল্লির ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ইসপাস কাসিফের নিউ ফ্রেন্ডস কলোনির বাড়িতে থাকছিলেন দারিয়া। পুলিশ সেই বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে।

ইসপাস ছাড়াও গোরক্ষপুরের অনুজ পোদ্দার নামের এক ব্যবসায়ীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, দারিয়া দিল্লির ‘পাওয়ার করিডরের’ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।

দারিয়ার আইপ্যাডে পাওয়া কয়েকটি চ্যাট অ্যাপসের কিছু যোগাযোগের ধরন দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ যে, দারিয়ার দুই দফায় ভারতে আসা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, সব কিছুর পেছনে তার চীনে থাকার যোগাযোগ রয়েছে।

২০১৬ সালে চীনে জি-২০ সম্মেলনের সময় পশ্চিমা দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করেছিল চীনা গোয়েন্দা সংস্থার পাতা হানিট্রাপের বিষয়ে। আর সেই বছরই ভারতে এসেছিলেন দারিয়া। দিল্লির একটি মডেলিং সংস্থায় কাজ নেন তিনি।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, যৌনতাকে ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তিতে একসময় এগিয়ে ছিল রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। কিন্তু গত এক দশকে কেজিবির থেকেও এ বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেছে চীনা গোয়েন্দারা।

তিনি আরও বলেন, ঠিক ওই সময়েই ভারতের মডেলিংয়ের বাজারেও হঠাৎ করেই ভিড় বাড়ে বিদেশি মডেলদের। যাদের অধিকাংশই সাবেক সোভিয়েতের বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা।

মডেলিং পেশাকে হাতিয়ার করেই রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত পার্টিতে যাতায়াত শুরু করে দারিয়া। সেখান থেকেই আলাপ দিল্লির ব্যবসায়ী ইমশামের সঙ্গে।

দারিয়া দ্রুত হিন্দি শেখে। ইউক্রেনের বাসিন্দা হলেও দারিয়া হিন্দি ভালোই বোঝে। ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলতে পারে। এ রকম পার্টিতে আনাগোনার সূত্রে আলাপ পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এই আইপিএসের সঙ্গে। পার্টি সার্কেলে ওই আইপিএস খুব পরিচিত মুখ। তখন তিনি দিল্লিতেই কর্মরত ছিলেন। দারিয়া দ্রুত ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় এই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে।

পুলিশকর্তার সঙ্গী হয়েই যাতায়াত বাড়ায় অন্যান্য পার্টিতে। ওই পার্টিগুলোতে রাজধানীর একাধিক শীর্ষ আমলা, সেনা কর্মকর্তারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

দারিয়ার ব্যবসায়ী বন্ধুকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বেশ কয়েকবার বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে বিনা নথি ও পরিচয়পত্রে দারিয়ার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এই পুলিশকর্তা।