ইউটার্ন হিরো আলমের, এবার স্বতন্ত্র নয় দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে চান
আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে এবার আর স্বতন্ত্র নয়; যেকোনো রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন নেবেন। বগুড়া-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। বগুড়া-৬ আসনেও অংশ নিতে পারেন। আরও দুদিন পর এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন।
রোববার বিকালে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জারে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন।
হিরো আলম জানান, তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরবর্তীতে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে পদত্যাগ করলে দুটি আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজধানীয় ঢাকায় একটি আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে মারপিটের শিকারও হন তিনি। বলেছিলেন এ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে ইউটার্ন নিলেন তিনি।
এবার স্বতন্ত্র নয়; কোনো দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেবেন। কোন দল থেকে টিকিট নেবেন তা জানতে আরও দুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দুদিন পর দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করার পর শূন্য বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর হিরো আলম অভিযোগ করেছিলেন, তাকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কি তাকে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করা হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার তা নাও হতে পারে। বহির্বিশ্ব সতর্ক থাকায় এবার ফেয়ার ইলেকশন দেখানোর জন্য স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলগুলোকে ১০০ আসন ছেড়ে দিতে পারে। অবশিষ্ট ২০০ আসন তারা দখল করতে পারে। এসব কারণে এবার কারচুপি করে পরাজিত করার সম্ভাবনা নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম এক সময় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা (ডিশ সংযোগ) করতেন। ২০০৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি মডেলিংয়ে যুক্ত হন। এরপর নিজের অভিনয় ও গানের দৃশ্য রেকর্ড করে ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচার করতে থাকেন। এতে এলাকার মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। ওই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পরপর দুবার সদস্য প্রার্থী হন। তবে প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন।
হিরো আলম গত ২০১৬ সালে ‘হিরো আলম’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে তাতে অভিনয় ও গানের দৃশ্য শেয়ার করতে থাকেন। পরবর্তীতে ইউটিউবে সরব হন। দিন দিন তার পোস্টগুলো ব্যাপক ভাইরাল হয়। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা হিরো আলম গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হামলার শিকার হন। ফলাফলে তিনি মাত্র ৬৩৮ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বিএনপির প্রার্থীরা দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলে আসনগুলো শূন্য হয়। মনোনয়ন বাতিল, চাহিদামতো প্রতীক না পাওয়াসহ নানা নাটকীয়তা শেষে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সিংহ প্রতীক না পেয়ে একতারা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বগুড়া সদর আসনে নৌকা মার্কার রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এখানে হিরো আলম (একতারা) পাঁচ হাজার ২৭৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান। বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেন (মশাল) ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এখানে তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলম পান রেকর্ড পরিমাণ ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। মাত্র ৮৩৪ ভোটে হিরো আলম পরাজিত হন।
ওই সময় তিনি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কারচুরি অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট করারও ঘোষণা দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তার বগুড়া-৪ আসনের ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তদন্তের নির্দেশও দিয়েছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন