ইউনূস ইস্যুতে ফেঁসে যাচ্ছেন হিলারি, তদন্ত শুরু
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের তদন্তে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের প্রভাব খাটানোর অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের এই স্বাধীন তদন্তে হিলারি তার অবস্থান থেকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা; সে বিষয়ে দেশটির বিচার বিভাগীয় সিনেট কমিটি দীর্ঘদিন পর এই তদন্ত শুরু করল। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে হিলারির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।
গত ১ জুন লেখা ওই চিঠিতে গ্রাসলে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন। এতে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন দূতাবাসের উপ-প্রধান জন ডানিলোউইক যাতে কমিটির কর্মকর্তাদের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়; সেবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠির শুরুতে সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান বলেছেন, হিলারি ক্লিনটনের ফাউন্ডেশন ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’র (সিজিআই) দাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুর্নীতির তদন্ত থেকে বাদ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আছে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটন ও তার স্টাফদের বিরুদ্ধে।
এতে বলা হয়েছে, তদন্ত থেকে ইউনূসকে বাদ দিতে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হুমকি দিয়েছিলেন। যদি তিনি (সজীব ওয়াজেদ জয়) তদন্ত ঠেকাতে তার মায়ের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা না করেন তাহলে মার্কিন আর্থিক হিসাব তদন্তের (আইআরএস) মুখে পড়বেন বলে হিলারির কর্মকর্তারা হুমকি দেন।
গত ১১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে, ২০১১ সালের মার্চে হিলারি ক্লিনটন তাকে ফোন করেছিলেন। এসময় হিলারি দাবি জানিয়ে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ইউনূসকে পুনর্বহাল করতে হবে। নতুন এই তথ্য-উপাত্ত ও বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দানের বিষয়টি অনুকূল হিসেবে কাজ করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের এসব পদক্ষেপ যৌক্তিক সন্দেহের উদ্রেক করেছে। তিনি নীতি-নৈতিকতা লঙ্ঘন ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি মানুষের যে আস্থা আছে তা অবমাননা করেছেন। বিল ক্লিনটন যখন আরকানসাসের গভর্নর ছিলেন তখন থেকেই হিলারির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইউনূসের। এক দশক ধরে হিলারির এই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা যায় ইউনূসকে।
মার্কিন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যানের লেখা ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, হিলারি ক্লিনটনের স্বামী বিল ক্লিনটন নোবেল কমিটির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে তদবির করেছিলেন এবং ২০০৬ সালে ইউনূস শান্তিতে নোবেল পান। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার দান করে ইউনূসের কোম্পানি। এছাড়া ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ২৫ হাজার থেকে ৫০ ডলার দেন ইউনূস।
২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড থেকে সরিয়ে দেয়। ২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সরকার ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থনৈতিক অনিয়মের বেশ কিছু অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয় সেই সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে আর্থিক হিসাব তদন্তের হুমকি পেয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগকে ব্যবহার করে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ঘনিষ্ঠ এক দাতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।
সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন গণমাধ্যম ডেইলি কলারকে বলেছিলেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে কমিশনের তদন্ত আটকাতে তার মায়ের ওপর প্রভাব খাটাতে ২০১০ এবং ২০১২ সালের মাঝে বারবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিশন।
জয় বলেন, তারা আমাকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের তদন্তের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছিলেন। আমি যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৭ বছর ধরে বৈধভাবে বসবাস করে আসছি এবং কখনই সমস্যা দেখা দেয়নি। কিন্তু ওই কর্মকর্তারা আমার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর হুমকি দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘তারা বার বার বলতেন, ইউনূসের প্রভাবশালী অনেক বন্ধু আছে এবং সবাই হিলারি ক্লিনটনের বিষয়টি তো জানেই। প্রত্যেকেই জানে যে হিলারিও তার বন্ধু।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন