ছাত্রী উদ্ধার, নোবেল আটক
ইডেন কলেজছাত্রীকে বাসায় আটকে ৭ মাস ধরে ধ*র্ষণ করেন নোবেল!

সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেলকে গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান বলেছেন, তিনি এক শিক্ষার্থীকে সাত মাস একটি বাসায় আটক রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করছিলেন। জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কলে পেয়ে বাসাটি থেকে নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে নোবেলকেও গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার ওসি মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর ডেমরা থেকে নোবেলকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশ।
মঙ্গলবার প্রথমে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো খুদেবার্তায় এই তথ্য জানানো হয়। পরে ডেমরা থানা-পুলিশও এই তথ্য নিশ্চিত করে।
পুলিশের ডেমরা থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন, গত নভেম্বরে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে গুলশানে দেখা করার কথা বলে ডেকে নেন নোবেল। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখান। পরে সাত মাস ডেমরার একটি বাসায় তাকে আটকে রাখেন তিনি। এই সময়ে তিনি ছাত্রীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন। এসব ঘটনা নিজের মুঠোফোনে ধারণ করেন। এই ভিডিও দিয়ে ছাত্রীকে তিনি ‘ব্ল্যাকমেল’ করছিলেন।
সম্প্রতি নোবেল এক নারীকে সিড়ি দিয়ে টেনে নামাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয় বলে উল্লেখ করেন ওসি মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ভিডিওতে থাকা নারীই এই ভুক্তভোগী ছাত্রী। ভিডিওটি দেখে ছাত্রীর বাবা-মা টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে বিস্তারিত জানতে পারেন। পরে তারা জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে ঘটনা জানান। সোমবার রাত ১০টার দিকে ডেমরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নোবেল পালিয়ে যান।
পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নোবেলকে ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ওসি মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, নোবেল সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য তিনি একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন। তবে পালানোর আগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, এ ছাড়া ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ছাত্রীটিকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনেও মামলা হয়েছে।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ভিডিও ধারণ
রাজধানীর ডেমরা থানায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে (৩১) গ্রেফতার করেছে ডিএমপির ডেমরা থানা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নোবেলের ডেমরার বাসার স্টুডিও দেখানোর উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে এসে আটক রাখে। পরে নোবেল ভুক্তভোগী নারীর মোবাইল ভেঙে ফেলে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ১৯ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নোবেলের বাসায় আটকে রাখা হয়।
মঙ্গলবার (২০ মে) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
সোমবার দিনগত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে ডেমরা থানাধীন স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়।
উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর পরিচয় হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে মাঝে মধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর নোবেল ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে মোহাম্মদপুর গিয়ে দেখা করেন এবং তার ডেমরার বাসার স্টুডিও দেখানোর উদ্দেশ্যে বাসায় নিয়ে যান। এরপর আরও ২ থেকে ৩ জন অজ্ঞাতপরিচয়ের জনের সহায়তায় বাসায় আটক রাখা হয় মেয়েটিকে।
তিনি বলেন, ঘটনার সময়ে নোবেল ভুক্তভোগী নারীর মোবাইল ভেঙে ফেলেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের ভুক্তভোগীকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যার মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে।
৯৯৯ এর কলের সাপেক্ষে ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশ ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেমরা থানায় একটি নারী নির্যাতন আইনে মামলা হয়।
মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন