ইবিতে কোটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান, শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলমান

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ও ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম ইবি শাখা। উচ্চ আদালত কর্তৃক জারি করা পরিপত্র পুর্নবহালের দাবিতে বিক্ষোভ ও ছাত্র সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝালচত্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডায়না চত্বরের সামনে এসে ছাত্র সমাবেশে মিলিত হয়। অন্যদিকে একই সময়ে বিশ^বিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বহালের দাবিতে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম ইবি শাখা।

কোটা বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’ ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল, পরিপত্র পুনর্বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল সরকারি চাকরিতে (১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণি) সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে ‘কোটা সংস্কার’ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করা।

সমাবেশে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৮ সালে এদেশের ছাত্রসমাজ ৫৬ শতাংশের যে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল। আন্দোলনের মুখে সরকার তখন কোটাব্যবস্থার সংস্কার না করে তা বাতিল করে ছাত্রসমাজের সঙ্গে বেঈমানি করেছিল। সরকারের সেই পরিপত্র এখন হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণা করে ৫৬ শতাংশের বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছে যা ছাত্রসমাজের মাঝে আবারও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

তারা আরও বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই বৈষম্য যেন আর না থাকে তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ জেগে উঠেছে। বর্তমান সময়ে অনেক শিক্ষার্থী চাকরি না পাওয়ার হতাশায় আত্মহত্যা করছে। অথচ বৈষম্যমূলক কোটা ব্যাবস্থা বহাল রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। কোটা থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে অন্যদিকে কোটাধারীরা সুবিধা পাচ্ছে। তাই আমরা বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার চাই। আমাদের আন্দোলনকে কিছু কুচক্রমহল মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী আন্দোলন বলে চালানোর চেষ্টা করতেছে। আমরা বলতে চাই, আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে নয় বরং তাদের পক্ষের লোক। কারণ মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্য চাননি।

অপরদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বলে আখ্যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের নেতারা বলেন, এই অপশক্তি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাবে উস্কানি দিচ্ছে। যারা দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের পরিবার আজ পরিবার সব চাইতে বেশি লাঞ্চিত হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আমাদের অধিকার। কিন্তু এখন যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে এরা কোন সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, এরা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। কারণ মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে কখনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে পারেনা। তবে আমরা এই অপশক্তিকে কখনই মাথা উঁচু করে দাড়াতে দিবো না।

এছাড়াও এদিন দিনব্যাপী অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা সমিতি ও সহায়ক টেকনিক্যাল কর্মচারী সমিতি। এতে ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপশি শিক্ষার্থীদের জরুরি কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট ও মার্কসিট তুলতে গিয়েও ফিরে আসছে।

এ বিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের সাময়িক কিছু ক্ষতি হচ্ছে। আমি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আশ^স্ত করছি, আমরা সেই পুঁষিয়ে দিবো। আমরা অতীতে করোনার সময় অধিকতর ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুঁষিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলবে। ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদেরও সজাগ থাকার অনুরোধ করছি।