ই-কমার্স কি ভারতের তাঁতীদের বাঁচাতে পারবে?
ভারতের ঐতিহ্যবাহী সিল্কের শাড়ি একসময় তৈরি হতে হাতে-চালানো তাঁতে। কিন্তু সেই তাঁতী পরিবারগুলোর অনেকেই এখন পেশা পরিবর্তন করছেন।
কারণ, এখন দিন বদলে গেছে। এখন অনেক কারখানাতেই বৈদ্যুতিক তাঁতে বোনা হয় সিল্কের শাড়ি। এসব শাড়ির ক্রেতাও বাড়ছে, – কারণ এগুলোর দামও হাতে-বোনা শাড়ির চেয়ে কম।
কিন্তু অন্য অনেকে আবার শিখছেন কম্পিউটার – যাতে তারা ই-কমার্সের মাধ্যমে তাদের শাড়ির বাজার সম্প্রসারিত করতে পারেন।
দক্ষিণ ভারতের একটি শহরে হাতে বোনা সিল্ক শাড়ির কারখানা দেখতে গিয়েছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা রেভিনা গুপ্তা।
তাদের ব্যবসা এখন নানারকম হুমকির মুখে। ৬ মিটার দীর্ঘ একটি সিল্ক শাড়ি বুনতে এই তাঁতীদের সময় লাগে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত।
কিন্তু যিনি এটা তৈরি করলেন, তার এতে আয় হবে ২৫ ডলার – যা যথেষ্ট নয়। এ কারণেই এ গ্রামের প্রায় অর্ধেক তাঁতী পরিবারই হাতে-বোনা শাড়ির কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ শিখছেন কম্পিউটারের কাজ।
এদেরই একজন ৩৫ বছর বয়স্ক সুন্দরী। তিনি চাইছেন কম্পিউটার ব্যবহার করা শিখে অনলাইনে শাড়ির ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে।
তিনি বলছেন, “আমি ছোট বেলা থেকে তাঁতের শাড়ি বানানোর কাজ করছি। কিন্তু এখন আমি এগুলো অনলাইনে বিক্রি করতে চাই। কিন্তু কি ভাবে তা করতে হয় তা আমি জানি না। তাই আমি এখন কম্পিউটার ক্লাস করছি।”
বলা হয়, ভারতে ই-কমার্সএর বাজারের আয়তন ২ হাজার ৭শকোটি ডলারের কম হবে না। কিন্তু ইন্টারনেটের ক্রেতারা দামী সামগ্রীর জন্য অর্থব্যয় করতে চান না।
কো অপটেক্স নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি এন ভেংকটেশ যেমনটা বলছিলেন, “যত কথাই বলা হোক, অনেক লোকই আছে যারা অনলাইনে শাড়ি কেনে না। কারণ তারা নিজের চোখে রঙটা কেমন দেখতে চায়, কাপড়টা কেমন, বুনোন কেমন – তা হাতে ধরে দেখতে চায়। ”
কিন্তু এখন ভারতের বাজারে ঢুকছে ওয়ালমার্ট আর আমাজনের মতো বড় বড় কোম্পানি। প্রতিনিয়ত আরো নতুন নতুন ক্রেতা অনলাইন শপিংএর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এর কি প্রভাব পড়ছে বাজারে?
অসীমা গুপ্তা নামের একজন ক্রেতা বলছিলেন তার অভিজ্ঞতা
“যে ওয়েবসাইট থেকে আমি শাড়ি কিনেছি তারা বলেছিল, তারা দক্ষিণ ভারতের আসল সিল্ক দেবে, তার মানও ভালো হবে। তা ছাড়াও দামটা ছিল – অন্যদের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।”
ভারতে প্রায় ৪০ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাই অনলাইনে যে বিপণন শুরু হয়েছে – তাকে বলা যায় সূচনা মাত্র।
প্রশ্ন হচ্ছে, যারা এতকাল ঐতিহ্যবাহী হাতে চালানো তাঁতে শাড়ি বুনতেন – তারা এই নতুন বাস্তবতার মধ্যে কম্পিউটার শিখে ই-কমার্স দিয়ে তাদের পুরোনো ব্যবসা বাঁচাতে পারবেন কিনা।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন