ঈদযাত্রা এখনও পুরোপুরি শুরু না হলেও মহাসড়কে ভোগান্তি শুরু

ঈদযাত্রা এখনও পুরোপুরি শুরু না হলেও সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানজটের ভোগান্তি শুরু হয়ে গেছে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে প্রতিদিনই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষজন। সড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ। এতে সড়কে নেমে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষজনকে। মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রতিবারের ঈদযাত্রার ভোগান্তির কথা। সেতুমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনও মূল্যে সড়ক সচল রাখা হবে। কিন্তু শনিবার (২৬ আগস্ট) পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কের যে তথ্য, তা ততটা আশাপ্রদ নয়।

কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না ওই পথের যাত্রীরা। সড়ক প্রশস্ত হয়েছে, কিন্তু মেঘনা-গোমতী সেতু এখনও দুই লেনের। এই সেতু পার হতেই এখন পেরিয়ে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শনিবারও এ মহাসড়কের কুমিল্লার ৯৬ কিলোমিটার অংশে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

সিরাজগঞ্জে রাস্তার কাজ চলছেউত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে চলছে মেরামত ও সংস্কার কাজ। ফলে স্বাভাবিক গতিতে যাতায়াত করতে পারছে না যানবাহনগুলো। সকালে গাজীপুরের শফিপুর থেকে চন্দ্রা, চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের পাকুল্যা পর্যন্ত জটের কারণে থেমে থেমে গাড়ি চলেছে। বন্যায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম পথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটেও পদ্মার প্রবল স্রোত ও ফেরি সংকটের কারণে পারে কয়েকঘণ্টা করে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যানবাহনকে।

কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার ৯৬ কিলোমিটার অংশে গত কয়েকদিনের মতো শনিবারও তীব্র যানজট ছিল। বিশেষ করে কুমিল্লার মেঘনা-গোমতী সেতু, গজারিয়া ও সোনারগাঁও এলাকাজুড়ে এ যানজট দেখা দেয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলেও ওই সেতু এখনও দুই লেনের। ফলে উভয়দিক থেকে আসা দ্রুতগতির গাড়িগুলোর গতি সেতুর কাছে এসে ধীর হয়ে যাওয়ায় সেতুর দুই পাশের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা জানিয়েছেন, ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। এছাড়াও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার অব্যাহত যানজটের প্রভাবে কুমিল্লার পুরো অংশে যানজট ছড়িয়ে পড়ে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

মেঘনা সেতুতে টোল আদায়ের ধীরগতিকেও যানজটের জন্য দায়ী করেছেন যানবাহনের চালকরা। তবে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ বলেন, ‘কুমিল্লা অংশে যানজটের প্রকৃত কারণ চার লেনের মহাসড়কের যানবাহনগুলো এদিকে এসে দুই লেনে পড়ে গতি হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া, ভারী যানবাহনগুলো মেঘনা সেতুতে উঠে বিকল হয়ে পড়ার কারণেও যানজট হচ্ছে।’

মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে শনিবার সকালে যানজট সৃষ্টি হলেও দুপুরের মধ্যে সড়ক ফাঁকা হয়ে যায়। শুক্রবারও এ সড়কে যানজট ছিল, থেমে থেমে যান চলাচল করেছে। শনিবার সকাল থেকে গজারিয়া অংশের ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা দেয়। তবে সাড়ে ১১টার পর থেকে মহাসড়কে যানবাহনের গতি স্বাভাবিক হয়।

এ ব্যাপারে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট মো. সাইফুর রহমান জানান, সকালে কিছুটা গাড়ির চাপ থাকলেও দুপুরে যানজট নেই।

টাঙ্গাইল : ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের পথে থেমে থেমে যানবাহন চলছে। গাজীপুরের শফিপুর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ছিল যানজট। শুক্রবার রাত থেকেই এ মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। শনিবার সকালেও যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় এ যানজটের সৃষ্ট হয়েছে বলে মির্জাপুর ট্রাফিক পুলিশের এএসআই শাহাবুল ইসলাম জানিয়েছেন। এ যানজট মির্জাপুরের পাকুল্যা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত হয়। দুপুরের পর এ সড়কে যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। থেমে থেমে যান চলাচল শুরু হয়।

যানজটে আটকে থাকা উত্তরবঙ্গগামী একটি বাসের চালক বলেন, অতিরিক্ত ট্রাকের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাসের যাত্রীরা বলছেন, প্রতি বছরই ঈদের আগে যানজটে পড়তে হয়। চার লেনের কাজ শেষ হলেই এ দুর্ভোগ কমবে বলে তাদের আশা।

গাজীপুর : গাজীপুরের বাইপাস থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত কোনও যানজট নাই। স্বাভাবিক সময়ে যেভাবে গাড়ি চলে, সেভাবেই চলছে সব। ঈদের কারণে আলাদা কোনও জট এখনও সৃষ্টি হয়নি। গাজীপুর ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দিনা চৌরাস্তা পর্যন্ত কোনও যানজট নেই। তবে শফিপুর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত হালকা জট আছে। থেমে থেমে গাড়ি চলছে।’

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রাজশাহী, নগরবাড়ী-হাটিকুমরুল-বগুড়া এবং হাটিকুমরুল-বনপাড়া-নাটোর মহাসড়কে সংস্কার কাজ চলছে। এ রুটে শনিবার সকাল থেকেই যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। তবে বড় ধরনের জটে এখনও বেশিক্ষণ গাড়ি আটকে থাকার মতো খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, সড়ক ঠিক করার জন্য সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ ও সেতুমন্ত্রী দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেছে। ২৫ আগস্ট ছিল সেতুমন্ত্রীর ঘোষণা করা সময়সীমার শেষ দিন। জেলা সওজ বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া ও দৌলতদিয়া-ফরিদপুর মহাসড়কের বেশিরভাগ জায়গায় ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তাই যানবাহন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকরা। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসব রুটের যাত্রীরা।

এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষার কারণে রাস্তার অবস্থার বিপর্যয় হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়কগুলোর সংস্কার কাজ চলছে।’

পাটুরিয়া-দৌলতিয়া নৌরুটে ফেরি পারাপারেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বিকল হয়ে পড়ে থাকায় এ রুটে ফেরির সংখ্যা কমে গেছে। আবার পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় স্রোতের কারণে ঘুর পথে চলতে হচ্ছে ফেরিগুলোকে। ফলে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এ কারণে দুই থেকে ‍তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ঘাটেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। ঈদের আগে ফেরি ও ট্রিপ সংখ্যা না বাড়ালে যাত্রীদুর্ভোগ চরমে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজমল হোসেন বলেন, ‘প্রকৃতি ভালো থাকলে ঘাট এলাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের কোনও ভোগান্তি হবে না।’ ঈদের আগে এই রুটে ১৮টি ফেরি রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।-প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।