ঈদুল আজহার মাহাত্ম্য নিয়ে বেরোবিয়ানদের ভাবনা

আত্মত্যাগের মহিমায় পরিশুদ্ধ হওয়ার উৎসব ইদুল আজহা। আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমাগত হয়। সারা বছরের ব্যস্ততায় ভরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটুখানি স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে ঈদের ছুটি।
এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করে আনন্দের অমেজ। সেই আনন্দ আর ভাবনা নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের অনূভুতি কথা জানাচ্ছিলেন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান

# ইদ আমাদের মনোজগৎ-এর ব্যাধি দূর করে
ইদুল আজহা হলো ত্যাগের অন্যতম নিদর্শন। ইদের আনন্দ শুধু পরিবার পরিজনের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে পারি আশেপাশে সকলের কাছে। আমাদের একটুখানি ত্যাগ অন্যের ইদ’কে করে তোলে অন্তহীন সুখের। ইদ আমাদের মনোজগৎ-এর ব্যাধি দূর করে দেয়। সমাজে কত রকমের বৈষম্য আছে ধর্ম-অধর্ম, ধনী-গরীব আরো কত কি, ইদ বৈষম্য দূর করার প্রাথমিক নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ইদের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গরু ছাগল ক্রয় করা থেকে শুরু করে ঘরের প্রতিটি কোণা নতুন করে সাজানোর মধ্য দিয়ে যেন ইদের আনন্দ আরো বহুগুন বেড়ে যায়।দূর-দূরান্তে যে যেখানেই থাকুক বাড়ি ছুটে আসে নাড়ির টানে। বহুদিন পর ঘরে ফেরা, পুরোনো বন্ধুদের সাথে আবার দেখা, মোড়ের চায়ের দোকানে আড্ডা‌ কিংবা হুটহাট কোথাও ঘুরতে চলে যাওয়া। প্রত্যেকের জীবনের ইদ বয়ে আনুক আনন্দ, এই প্রত্যাশা করি।
সামিয়া হক ইরা
অর্থনীতি বিভাগ

# বিনয়ী, পরোপকারী ও দেশের যোগ্য কর্ণধার হিসেবে গড়ে তোলে
ত্যাগের মহিমায় নিজেকে পরিশুদ্ধ করার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে কোরবানি। আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে পবিত্র জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মুসলমানরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এটি মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ইদুল আজহা।
ঈদুল আযহার দিন পশু কোরবানির মাধ্যমে মানুষ তাদের মনের ভিতর থাকা সংকীর্ণতা এবং জরাজীর্ণতাকে উৎসর্গ করে থাকে।
শুধু তাই নয় কোরবানি আমাদেরকে শেখায় সম্পৃক্ততার বন্ধন। মানুষের সাথে সুখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার অন্যতম একটি উৎসব.
ইদুল আযহা আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে বিনয়ী হতে হয়, কিভাবে পরোপকারী হতে হয়, কিভাবে সমাজের উপকার করতে হয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবেও তার শিক্ষা জীবনে এবং পরবর্তীতে সামাজিক এবং পেশাগত জীবনেও এর প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে এই মহিমান্বিত গুণগুলো যদি অর্জন করতে পারি তাহলে আমরা একদিন হয়ে উঠতে পারব দেশের যোগ্য কর্ণধার।
জীবন প্রধান ওহী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

# জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার জন্য উৎসর্গ করার মানসিকতা তৈরিতে
ইদ উল আজহা অর্থ “ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। মহান রব কে খুশি করার উদ্দেশ্যে ত্যাগ করে ইদুল আযহা থেকে আমরা ত্যাগের শিক্ষা নেই। ত্যাগের মাধ্যমে স্রষ্টার সৃষ্টিকে নিয়েও ভাবি। ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করি।
একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে মানুষ যখন ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত হচ্ছে, আসুন ইদ উল আযহার মাধ্যমে তাদেরকে ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেই । ইদ উল আজহার এই দিনে দাঁড়াই খেটে খাওয়া গরিব দুঃখী মানুষের পাশে। কুরবানীর আসল উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে সেখানে।
মোঃ আল আমিন রোমান
মার্কেটিং বিভাগ

# সমাজে শান্তির বাণী ছড়িয়ে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে
মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবের মূল বার্তা ত্যাগ, সমর্পণ এবং মানবিকতা। ঈদুল আজহার মূল আকর্ষণ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা, যা নবী ইব্রাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগের স্মৃতি হিসেবে পালন করা হয়।
এই উৎসব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত ত্যাগ শুধুমাত্র সম্পদ বা প্রাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি নিজের অহংকার, লোভ, এবং স্বার্থপরতাকেও ত্যাগ করার মধ্যেই নিহিত।
বর্তমান সময়ে, ঈদুল আজহা আমাদের সমাজে মানবিকতা, একতা, এবং সহানুভূতির গুরুত্বকে আরও শক্তিশালী করে। কোরবানির মাংস গরিব ও দুঃস্থদের মধ্যে বণ্টন করা হয়, যা সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সহমর্মিতার প্রতীক।
তাছাড়া, আধুনিক যুগে ঈদুল আজহা পরিবেশ সচেতনতার প্রতিও আমাদের মনোযোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে। কোরবানির সময় পরিচ্ছন্নতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা জরুরি, যা আমাদের পরিবেশ এবং সমাজ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে পারি, যা আমাদের সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
মোঃ নাদিমুল ইসলাম পিয়াল
বিভাগ: জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ

# রবের প্রতি পূর্ণ অনুগত্যের প্রতীক
ইদুল আজহা, যা কুরবানি ঈদ নামেও পরিচিত, মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানি করার প্রস্তুতির স্মৃতিতে উদযাপন করা হয়।
আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ইদুল আজহা মূলত ত্যাগের একটি প্রতীক। এটি আমাদেরকে আত্মত্যাগ, বিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। ঈদের দিন মুসলমানরা পশু কুরবানি করে এবং সেই মাংস আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে, যা সাম্য ও সহমর্মিতার এক অপূর্ব উদাহরণ।
এছাড়া, ইদুল আজহা আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহানুভূতির বন্ধনকে আরও মজবুত করে। এই দিনে মুসলমানরা একত্রিত হয়ে নামাজ পড়ে এবং একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে।সার্বিকভাবে, ইদুল আজহা মুসলমানদের জীবনে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম রনি
কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ

# সমানাধিকার বাস্তবায়নের অন্যতম সুযোগ
ঈদুল আজহা হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র দুইটা ঈদের মধ্যে একটা। এই ঈদে অনেকে মহান আল্লাহ তায়ালার নামে বিভিন্ন পশু কোরবানি করে। অনেকে আবার তাদের সামর্থ্য না থাকায় কোন কিছুই কোরবানি করতে পারে না। এমন কিছু মানুষ আছে যারা কোরবানির নামে তাদের ফ্রিজ মাংস দিয়ে ভর্তি করে এতে অনেক গরিব মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
হাজারো দরিদ্র মানুষ আছে যারা মাংস রান্নার সব সরঞ্জাম রেডি করে রাখে অনেকদিন পর একটু ভালো মন্দ খাবে বলে কিন্তু শেষে তারা মাংসই পায় না। ধনী দরিদ্র সবার সমান অধিকার রয়েছে। ধনীদের উচিত গরিবদের হক যথাযথ ভাবে পালন করা। যাতে গরিব মানুষরাও হাসি মুখে তাদের ঈদ উদযাপন করতে পারে।
ঈদ আনন্দের। না পাবার মাঝেও অনেক কিছু পাওয়া। তাই ঈদ প্রতিটি মানুষের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, হাসি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক – এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।
মুক্তি খাতুন
ইংরেজি বিভাগ