ঈদেও থামছে না ইফা শিক্ষকদের কান্না
ঈদুল ফিতর আমাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদকে ঘিরে পরিবারের সদস্যদের নানা রকম চাহিদা এবং আবদার পূরণ করা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ঈদে সকল ফ্যামিলিতেই শিশুদের আবদারগুলোকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে পূরণ করা হয়। ঈদকে ঘিরে ঘরে-ঘরে আনন্দের প্রবাহ বিরাজ করে কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মাঝেও প্রকল্প জটিলতায় গত ১৬ মাস ধরে বেতনহীন মানবেত জীবন-যাপন করছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসার ২ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা। গত ২ ঈদের মতো বর্তমান ঈদুল ফিতরেও শিক্ষকদের পরিবারে আনন্দের পরিবর্তে বেদনার ঘনঘটা।
সামান্য সম্মানীর পাশা-পাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মাদরাসা শিক্ষকের সংসার চলার অন্যতম মাধ্যম ছিলো- কোচিং, টিউশনি। করোনার কারণে অনেকের সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অভুক্ত পরিবারের দিকে লক্ষ রেখে- নিরূপায় হয়ে- অনেকেই সঞ্চিত টাকা-পয়সা খরচ করছেন। রাস্তায় সবজি, ফলমূল ইত্যাদি বিক্রি করছেন। গয়নাগাটি, আসবাবপত্র ও পরিবারের শেষ সম্বল জায়গা-জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ধার-দেনার দায়ে আত্মার স্বাধীনতা যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি সমাজিকভাবে শিক্ষকদের আত্মসম্মান নষ্টের ভয়েও চিন্তিত হতে হচ্ছে।
আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ হচ্ছে শিক্ষকদের প্রধান গুণ আর শিক্ষকরা সব সময়ই আত্মমর্যাদাবান হয়ে থাকেন। আত্মমর্যাদাহীন শিক্ষক জাতি কখনো চায় না। আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে- শিক্ষকগণ না পারছে কারো কাছে হাত পাততে আর না পারছেন সইতে! তেমনি না করোনার এই সংকটাপন্ন সময় না ত্রাণের লাইনেও দাঁড়াতে পারছেন না।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের জটিলতা নিরসন ও বকেয়া বেতনভাতা প্রদানের জন্য স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ইত্যাদি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম মন্ত্রণালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সরকার বিভিন্ন স্তরে ভাতা এবং প্রণোদনা প্রদান করলেও ১০১০ টি মাদরাসার শিক্ষক সম্পূর্ণভাবে এসব থেকে ও বঞ্চিত আছেন। তাঁরা বেতনের আশায় তীর্থের কাকের চেয়েও অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছেন। আশ্বাসে- আশায় একের পর এক দিন যাচ্ছে, মাস যাচ্ছে, ঈদ যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা হচ্ছে না! এসব শিক্ষকের দীর্ঘশ্বাস আর চাঁপা কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে উঠছে।
দেশ যখন উন্নয়নের বিভিন্ন লেভেল স্পর্শ করছে তখন শিক্ষকরা ভুখা পেটে- ভগ্ন হৃদয়ে আকাশের দিকে চেয়ে কান্না করছেন! মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের অভুক্ত রাখা কোন সমাজেই কাম্য নয়।
যেসব কর্তৃপক্ষের হাতে এর সুষ্ঠু সমাধান রয়েছে আমরা তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত এবং প্রতিষ্ঠিত ১০১০ টি দারুল আরকাম মাদরাসা শিক্ষকদের কান্নার প্রতি কৃপা দৃষ্টি রেখে দ্রুত প্রকল্প জটিলতা নিরসন ও বেতনভাতা প্রদান করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক ফ্যামিলিগুলোকে বাঁচার সুযোগ দিন।
লেখক : মামুন আবদুল্লাহ | যুগ্ম মহাসচিব, দারুল আরকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন