ঈদ উদযাপন ও কিছু কথা
ঈদ উদযাপন ও কিছু কথা
মো. শাহ্জালাল
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে ধনী গরিবের ব্যবধান দূর করা, ঈদ মানে সবাইকে সাথে নিয়ে সূখ দূঃখ ভাগাভাগি করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমান সমাজে আনন্দ আর খুশির বার্তা নিয়ে আগমন করে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তেমনিভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানী করার মধ্য দিয়ে ঈদুল আযহা উদযাপন করা হয়। ঈদ উদযাপনের যেমন ধর্মীয় মর্যাদা ও তাৎপর্য রয়েছে তেমনি মুসলমানদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও ঈদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বছরের দুইটি ঈদে পরিবার আতœীয়-স্বজন সবাইকে সাথে নিয়ে ঈদ উদযাপন বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথেও একাকার হয়ে আছে। শথ ব্যস্ততা, কোলাহলপূর্ন জীবন ও কর্মময় একগুয়েমী থেকে বেড়িয়ে অন্তত একটি দিন ভিন্নভাবে কাটানোর জন্য যত আয়োজন যত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কোন কিছুই যেন বাধ মানে না।
ঢাকাসহ সারাদেশের শহরাঞ্চলে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষই গ্রাম থেকে আসা। গ্রামই যেন সবার আপন ঠিকানা। নাড়ির টানে সবাই ছুটে চলে স্বজনের সন্ধানে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের ছুটে চলার দৃশ্য দেখে প্রতি বছরেই আমরা বিস্ময় প্রকাশ করি। তবুও ছুটে চলি আপন মনে নাড়ির টানে।
২০২০ এবং ২০২১ সালের ঈদ উদযাপন ছিলো ইতিহাসের ব্যতিক্রম ঈদ। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে করেছে ব্যহত। সামনে নিয়ে এসেছে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা। অন্যান্য সকল কার্যক্রমের পাশাপাশি মানুষের ইবাদত বন্দেগীতে এসেছে ভিন্ন চিত্র। জানাযা, জুমা ও ঈদের নামাজের মত ইবাদতে মেনে চলতে হচ্ছে স্বাস্থবিধিসহ নানা বাধ্যবাধকতা। এর মধ্যে অফিস আদালত চলছে সীমিত আকারে। এসব কিছুর পরেও মানুষ ঘরমুখী ঈদ উদযাপনের মনোভাব থেকে বের হতে পারেনি সাধারণ মানুষ। সকল নির্দেশনা ও বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ছুটে চলা ঘরমুখী মানুষের গতিপথে ঘটছে নানা দূর্ঘটনা, বিপাকে পড়তে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের।
গত ১৮ মে ২০২১ তারিখে প্রকাশিত গ্রীন ক্লাব অব বাংলাদেশ এবং নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক যৌথ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর (২০২১সাল) ঈদুল ফিতর কেন্দ্রীক যাতায়াতের ১২ দিনে ২০৭ টি সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে যার কারনে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৪৯ জন মানুষের। যার মধ্যে নারী শিশু, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, আহত হয়েছে প্রায় ৩৮৫ জন। এই চিত্র শুধু এ বছরের নয়। গত বছরে (২০২০ সাল) ঈদ উদযাপনের কেন্দ্রীক রাজপথে ১৮৭ টি দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিলো ১২ দিনে ১০৭ জনের।
করোনা ভাইরাসে মৃত্যু এবং আক্রান্ত সংখ্যা যখন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে ঈদ উপলক্ষ্যে যাতায়াতের বিধি-নিষেধ থাকলেও তা মেনে চলেনি অধিতকাংশ মানুষ। রাস্তার এই বিশৃংলা রুখতে পারা যায়নি পুলিশ, বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়েও।
রাজপথে ঈদের এই আনন্দ বিলিন হওয়ার দায় আসলে কার তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক থাকলেও নাগরিক হিসেবে সবার মধ্যে সচেতনতাবোধ জাগ্রত হলে হয়তো এই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও কমানো যেতো। অন্তত একটি বা দুইটি ঈদ নিজ নিজ বাসস্থানে উদযাপন করার মানসিকতা লালন করতে পারলে খুব বেশি ক্ষতি হয়তো হয় না। একটি ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে দুই শতাধিক প্রাণ পৃথিবী থেকে পৃথক হয় আজীবনের জন্য।
Pandemic এই পরিস্থিতিতে ঈদের জামাত এবং ঈদ পরবর্তী পর্যটন এলাকার চিত্র আরও ভয়াবহ। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থবিধির কোন বালাই নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। বর্তমান সময়ে মানুষের উদাসিনতার কারণে বেড়ে চলেছে বিভিন্ন সংক্রামন এবং সর্বত্র বিশৃংখলা। সুতরাং একজন নাগরিক হিসেবে সচেতন থেকে সরকারি নিয়ম নীতি মেনে ব্যক্তি নিজে এবং পরিবার ও সমাজকে নিরাপদ রাখা সকলের একান্ত কর্তব্য এখন সময়ের দাবী।
লেখক:
মো. শাহ্জালাল
এমফিল গবেষক
ও
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন