ঈদ-জামাতে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২৩
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামে ঈদের জামাত নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হামলা-পাল্টা হামলা, গুলি ও বোমার আঘাতে উভয় পক্ষের ২৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
ঘটনার পর ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার হাপানিয়া গ্রামে শনিবার সকালে কোরবানির ঈদের জামাতে বক্তব্য দেয়া নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা এমদাদ মেম্বার ও মহিবুল ইসলাম মন্টুর সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে জামাত শেষে উভয়পক্ষের সমর্থকরা হামলা পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র গুলি বোমা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অপরের উপর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড গুলি ছোঁড়ার কথা স্বীকার করেছে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বা্স্থ কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে জয়নাল আবেদীন নামে একজন ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে জয়নাল আবেদীন, মতিয়ার রহমান, ওসমান গণি, শহিদুল ইসলাম, সেলিম রেজা, মিলন আলী, হাসান আলী, আজিরুল, গফুর, আশরাফ আলী, কাইয়ুম আলী, মকলেছ আলী, ফিরোজ, সুইট, সেলিম ও আফজালকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছেন মহিবুল ইসলাম মন্টু।
একইভাবে আহত আব্দুল ওহাব, রফিকুল, আবু তাহের, লিটন, কালু, সরোয়ার ও রানাকে নিজের কর্মী বলে দাবি করেছেন এমদাদ মেম্বার।
স্থানীয় বাসিন্দা রবজেল মন্ডল জানান, গ্রামের মাদ্রাসার ছয় বিঘা জমির আম বাগান নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই নেতা এমদাদ মেম্বার ও মহিবুল ইসলাম মন্টুর মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরেই ঈদের জামাতে বক্তব্য দেয়া নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
মাহবুল ইসলাম মন্টু দাবি করেছেন, ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সকাল ৮টায়। সেই সময় পেরিয়ে গেলেও নামাজ শুরু না হওয়ায় সাধারণ মুসল্লিরা প্রতিবাদ করেন। এরপর এমদাদ মেম্বার নিজেই বক্তব্য দিতে শুরু করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মুসল্লি। নামাজ শেষে বের হওয়া মাত্রই এমদাদের অনুসারীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে জখম করে। হামলাটিকে পূর্ব পরিকল্পিত বলেও দাবি করেন মন্টু।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন এমদাদ মেম্বার। বলেন, ‘খুতবা চলাকালে মন্টু ও তার অনুসারীরা জামাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আমি ও আমার বেশ কয়েকজন এর প্রতিবাদ করলে নামাজ শেষে মন্টুর নেতৃত্বে প্রথম আমার ওপর হামলা চালানো হয়।’
এদিকে, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার সেলুন সদর হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান এবং তাদের খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি হামলায় জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে প্রাথমিকভাবে আটক করা হয়েছে। নতুন করে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন