ঈসরকারের কাছে চাল নেই, তাই ঈদে ভিজিএফ কর্মসূচি বাতিল

সরকারের কাছে চাল নেই, তাই বাতিল অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি। অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে গরিব মানুষের জন্য ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকায় চাল)’ নামে আরেকটি কর্মসূচি আছে বলে এই কর্মসূচির দরকার নেই।

আবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা কেজি দরে যে চাল বিক্রি করা হতো, তাও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে গরিব মানুষের সামনে বাজার থেকে চড়া দরে চাল কিনে খাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৪৮ টাকা।

গত বছর ঈদুল ফিতরে ৬৪ জেলার ৪৮৯ উপজেলায় ৮৮ লাখ দুস্থ পরিবারকে বিনা মূল্যে ২০ কেজি করে চাল সরবরাহ করে সরকার। এ জন্য ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৫ টন চাল বরাদ্দ হয়। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি খাদ্য অধিদপ্তর চালের মজুত সংকটের যুক্তিতে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ খাতে ২০ কেজির পরিবর্তে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এখন পুরো কর্মসূচিই বাতিল হলো। বর্তমানে কার্ডধারী প্রায় এক কোটি পরিবার ভিজিএফের সুবিধাভোগী। এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধান ধর্মীয় উৎসব ও নানা সময় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনা মূল্যে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ভিজিএফ কর্মসূচি বাতিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মূলত উৎসবের সময় আমরা যে ভিজিএফ চাল দিতাম, তা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু দুর্যোগের সময় দুর্গত ও গরিব মানুষদের যে ভিজিএফ দেওয়া হয়, তা চলবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই ভিজিএফ কর্মসূচি বন্ধ করার প্রস্তাব করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে অর্থমন্ত্রী জানান, ‘বর্তমানে সাধারণ ভিজিএফ নামে একটি খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম প্রচলিত আছে। এ ছাড়া দুর্যোগ উপলক্ষে সরাসরি খাদ্য বিতরণে খাদ্য মন্ত্রণালয় দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়ে থাকে। আমার মনে হয়, এখন ভিজিএফ কার্যক্রম পরিচালনা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।’

এদিকে রাজধানীর খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচি বন্ধ থাকা নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিবেশকেরা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে সরকার তাঁদের চাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এখন আটা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আটার কদর কম। এ কারণে তাঁরা আটা বিক্রি করতে উৎসাহী নন।

অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দাবি করেছেন, খোলা বাজারে চাল বিক্রি বন্ধের সঙ্গে চালের মজুত কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এটি নিয়মানুযায়ী বন্ধ আছে। বছরের এই সময়টায় কৃষকদের কাছ থেকে চাল কেনা হয়। এখন খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা হলে সেই চাল কিনে আবার সরকারের কাছে বিক্রি করার আশঙ্কা থাকে। তবে হাওরে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে কম দামে বা বিনা মূল্যে চাল বিতরণ অব্যাহত আছে।

এদিকে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মিলমালিকদের তাঁদের গুদামে চাল মজুতের হালনাগাদ তথ্য জানাতে বলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। মিলমালিকদের কাছে কী পরিমাণে চাল আছে, সেই তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। কেউ চালের বেশি মজুত করল কি না, সেই তথ্য সরকার জানে না। এ জন্যই গুদামে চাল মজুতের হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

সরকারি গুদামগুলোতে এখন চালের মজুত ১ লাখ ৯৮ হাজার টনে নেমেছে। গত বছর এই সময়ে যা ছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার টন। এ ছাড়া সরকারি চাল ক্রয় কার্যক্রমেও গতি নেই। ২ মে থেকে শুরু হওয়া চাল ক্রয় কার্যক্রমের আওতায় ৪ জুন পর্যন্ত প্রায় এক মাসে ৭ হাজার ৭৫৩ টন সেদ্ধ ও আতপ চাল কিনতে পেরেছে সরকার। যদিও চার মাসে ৭ লাখ টন ধান ও ৮ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।