উত্তরায় বিমান বি/ধ্ব/স্ত: মৃ/ত্যু/র মিছিলে বোনের পর ভাইও

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে বোন তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়ার (১৩) মৃত্যুর পর এবার ভাই আরিয়ান আশরাফ নাফিও (৯) চলে গেল।
এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। এছাড়া, এই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৬৫ জন।
নাফি (৯) উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
বুধবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউ-১০ নম্বর ইউনিটে চিকিৎসাধীন মারা যান নাফি। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নাফির শরীরের ৯৫% পুড়ে গিয়েছিল।
নাজিয়া ও নাফি বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় থাকত। নাজিয়া তৃতীয় শ্রেণীতে আর নাফি প্রথম শ্রেণীতে পড়ত।
রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
তিনি বলেন, “উত্তরা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ নাফি রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যায়। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেইম বার্ন হয়েছিল। এর আগে গতকাল রাত তিনটার দিকে তার বোন নাজিয়া মারা যায়। তার শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে ১১ জন শিক্ষার্থী-শিক্ষক মারা গেলো। এছাড়া ঢাকা মেডিকেলের বার্নে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছিলেন দুই ভাইবোন তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়া ও আরিয়ান আশরাফ নাফি। মঙ্গলবার ভোর ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মারা যায় নাদিয়া। এরপর বুধবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন মারা গেল নাফি।
তারা দুজনেই ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলামের সন্তান। একমাত্র ছেলে ও মেয়েকে ভালো স্কুলে লেখাপড়ার জন্য আশরাফুল ভোলা ছেড়ে উত্তরায় বসবাস করতেন।
উল্লেখ্য, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিক্ষিকা মাসুকা। ভোর রাতের দিকে ৯ বছরের শিশু বাপ্পি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইতে মারা যায়। তার শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। মধ্যরাতে আরও চার শিক্ষার্থী মারা যায়। এই চারজনের মধ্যে এরিকসন শরীরের ১০০ শতাংশ, আরিয়ানের শরীরের ৮৫ শতাংশ, নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ এবং সায়ান ইউসুফ এর শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
এর আগে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ, সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফনান ফাইয়াজ, মাইলস্টোনের প্রাইমারি সেকশনের হেড কো-অর্ডিনেটর মাহেরীন চৌধুরী ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সামিন মারা যায়।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন হাসপাতালে নিহতের সংখ্যা (২২ জুলাই) ৩২ জন দাঁড়িয়েছে। আর আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন। এরমধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮, নিহত নেই। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত ৪৬, নিহত ১০। ঢাকা মেডিকেলে আহত ৩, নিহত ১। ঢাকা সিএমএইচে আহত ২৮, নিহত ১৬। উত্তরা লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১৩, নিহত ২। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আহত ৬০, নিহত ১। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত একজন, নিহত নেই। শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত একজন, নিহত নেই। ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত দুজন, নিহত ১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত তিনজন এবং সেখানে কোনো নিহত নেই।
গত সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে, যার বেশিরভাগই শিশু। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন