উদ্বোধনী ম্যাচেই মুখোমুখি সাকিব-নাসির

মনে হতে পারে, সিলেট শহর বুঝি ইয়া বড় বড় বিলবোর্ড আর বড় বড় তোড়নে ঢাকা। শহরে পা দিলেই যে প্রমাণ সাইজের বিলবোর্ড আর বিরাট বিরাট তোড়ন চোখে পড়বে, তাও নয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে তোড়ন নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু।

তার বেশীর ভাগ লিখাই এবারের বিপিএলের প্রথম পর্বের স্বাগতিক দল সিলেট সিক্সার্সকে অনুপ্রাণিত করে। কোন কোন তোড়ন আবার সিলেটের সন্তান ও অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছায় সিক্ত করা।

সিলেটবাসী অমন তোড়ন নির্মান করতেই পারেন। কারণ তাদের দল সিলেট সিক্সার্স প্রথমবার নিজ বিভাগ ও জেলা শহরে খেলতে নামছে। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত স্থানীয় সাংসদ, সিলেট সিক্সার্সের অন্যতম স্বত্বাধিকারীও তার ছেলে।

আগামীকাল শনিবার এবারের বিপিএল শুরুর দিনই মাঠে নামবে স্বাগতিকরা। চা-বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর সাথে অনুপম স্থাপত্ব ও চমৎকার নির্মাণ শৈলির মিশেলে দৃষ্টিনন্দন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডাইনামাইটসের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্স।

দুপুর দুইটার ঐ ম্যাচকে কেউ কেউ সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেনের লড়াইও বলছেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা, গতবারের মত এবারো ঢাকা খেলবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। আর সাব্বির রহমান রুম্মন এ+ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার হলেও সিলেট খেলবে নাসিরের ক্যাপ্টেন্সিতে।

ম্যাচকে সামনে রেখে শুক্রবার জুমার নামাজের আগে প্র্যাকটিস করেছে ঢাকা। আর সিলেট অনুশীলন করেছে সন্ধ্যায় ফ্লাডলাইটের আলোয়।

এই ম্যাচে সব হিসেবে নিকেশেই ফেবারিট চ্যাম্পিয়ন ঢাকা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব একাই একশো। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশের সেরা পারফরমারও সাকিব। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে সাকিবের মানের অলরাউন্ডার বাংলাদেশে নেই। ভারতের আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ সহ বিশ্বের সব বড় বড় টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে দাপটের সাথে খেলা সাকিব পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন একাই।

তার সাথে আছেন লঙ্কান ক্রিকেটের কুমারা সাঙ্গাকারা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনিল নারিন, এভিন লুইস ও কাইরান পোলার্ডের মত অভিজ্ঞ এবং দারুণ কার্যকর পারফরমার। জানা গেছে , এসব বিদেশীকে দেখা যাবে কালকের ম্যাচে । সাথে নাদিফ চৌধুরী এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও ঢাকার লাইনআপে আছেন।

এমন এক ঝাঁক তারকা ও প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারে ঠাসা ঢাকার প্রতিপক্ষ সিলেট সিক্সার্স তারুণ্য নির্ভর দল। নাসির হোসেনের নেতৃত্বে সাব্বির রহমান , স্থানীয় টপ অর্ডার ইমতিয়াজ তান্না , আবুল হাসান রাজু, কামরুল ইসলাম রাব্বি আর মোহাম্মদ শরীফ ও তাইজুল খেলবেন এবার সিলেটে। সঙ্গে লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট , লঙ্কান ওপেনার উপুল থারাঙ্গা, আন্দ্রে ফ্লেচার, দানুষ্কা গুনাথিলাকা, ক্রিস্টোফার সান্তোকিও আছেন। বাঁহাতি তাইজুল ইসলামের সাথে আছেন লঙ্কান লেগস্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

টিকেট বিক্রি নিয়ে অনিয়ম। তুলকালাম। টিকিট পেতে রাজ্যের ভোগান্তি। ২০০ টাকার সাধারণ গ্যালারি কালোবাজারে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তারপরও ভাবা হচ্ছে, আজ ২০ হাজার দশর্কের সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ভরে যাবে। স্বাগতিকরা তাই গ্যালারি ভর্তি সমর্থনপুষ্ট থাকবে।

ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও মনে করছেন, স্বাগতিক সিলেটের পক্ষে থাকবে গোটা মাঠ। তা নিয়ে অবশ্য চিন্তা নেই সাকিবের। মানছেন মাঠ দর্শক ভর্তি থাকবে। তবে এটাকে প্রতিবন্ধকতার চেয়ে তার কাছে ভাল ম্যাচ হবার উপকরণ বলেই মনে হয়। তাইতো মুখে এমন কথা, ‘সিলেটের ভেন্যুতে খেলা হচ্ছে সিলেটের সাথে, অবশ্যই বড় একটা ম্যাচ হবে। আমি আশা করি স্টেডিয়াম দর্শকে পরিপূর্ণ থাকবে। খুব ভাল একটা ম্যাচ হবে। দর্শকরাও উপভোগ করতে পারবে। আমি চাই আমরা যেন ভাল করতে পারি এবং জিততে পারি। এজন্য সব কাজগুলো ঠিক মত করা দরকার।’

অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচটি সিলেটে খেলতে পেরে খুশি সিলেট অধিনায়ক নাসির। সন্ধ্যায় ফ্লাডলাইটের আলোয় প্র্যাকটিস করতে এসে সিলেট অধিনায়ক উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বলেন, ‘যেহেতু আমরা স্বাগতিক, তাই নিজেদের মাঠে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারা একটা অন্যরকম অনুভুতি। সাপোর্ট আমাদের দিকেই থাকবে।’

মনে মনে চ্যাম্পিয়ন হবার স্বপ্ন থাকলেও এখন ওসব নিয়ে ভাবতে চান না নাসির। তার চিন্তা ভাল খেলা। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ভাল করা। এ সম্পর্কে জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘টুর্নামেন্ট চলবে ৪০ দিন ধরে। শুরুর আগে চূড়ান্ত পরিণতি নিয়ে ভাবতে চাই না। আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করতে চাই। সাথে করণীয় কাজগুলো ভালমত করাও লক্ষ্য।’