উদ্বোধন হলো দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু
যশোরের মণিরামপুরের ঝাপা বাওড়ের পানিতে গ্রামবাসীর টাকায় নির্মিত সেই ভাসমান সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৩’শ ফুট দৈর্ঘ্য ভাসমান সেতু তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যারেল ও লোহার শিট। ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজেদের অর্থায়নে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি সম্পূর্ণ এলাকাবাসীর অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। ভাসমান সেতুটি চালু হওয়ায় ওই এলাকায় যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
জানা যায়, মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দেশের বৃহত্তর জলমহল ঝাঁপা বাওড় বেষ্টিত এই ঝাঁপা গ্রাম। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মল্লিকপুর গ্রাম থেকে বাওড়টির উৎপত্তি হয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাওড়টি প্রায় ৩ বর্গ কিলোমিটার ঝাঁপা গ্রামকে বেষ্টিত করে ওই গ্রামেরই আরেক প্রান্ত কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী লক্ষিকান্তপুর গ্রামে শেষ হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার জন অধ্যুষিত গ্রামটিতে রয়েছে ৩টি ওয়ার্ড। বংশপরমপরায় গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে নৌকায় পারাপার হয়ে আসছিল। গ্রামবাসীর চেষ্টায় এই দুর্ভোগের অবসান ঘটলো বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন।
ভাসমান সেতু উদ্বোধনে ঝাঁপা গ্রামের সব বয়সী মানুষের চোখে-মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠতে দেখা যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত গ্রামবাসীর অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। আবুল কাশেম নামের এক বয়োবৃদ্ধ আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, জীবন সায়াহ্নের পড়ন্ত বেলায় এমন দৃশ্য দেখে যেতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এ সময় ঝাঁপা বাওড়ের দু’কুলে উৎসুক নানা বয়সীর নারী-পুরুষের ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মত।
ভাসমান সেতু নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুল বলেন, ভাসমান সেতু নির্মানে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিটিং করা হয়। তাতে সাড়াও মেলে আশাতীত। সংগঠনের ৬০ জন সদস্যের অর্থায়নে শুরু করা হয় ১৩শ’ ফুট দৈর্ঘ্যর ভাসমান সেতু নির্মানের কাজ। সংগঠনের বাইরেও অনেক কৃষক, শ্রমিক সামিল হন তাদের সাথে। ৯ ফুট প্রস্থের সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ৮৮৯টি বড় আকারের প্লাষ্টিকের ব্যারেল। যা সংযুক্ত রাখার জন্য লোহার শিট ব্যাবহার করা হয়েছে। একই সাথে ব্যারেলের উপর দিয়ে চলাচলের জন্য দেয়া হয় ১৩শ’ ফুট দের্ঘ্যর লোহার পাত। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয়েছে বৃহত্তর ভাসমান এ সেতুটি।
তবে, বর্ষা মৌসুমের আগেই ভাসমান সেতুটির দু’পাশে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এতে আরোও প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় হবে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভাসমান সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সাধারন মানুষ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ভাসমান সেতুটি।
ঝাঁপ ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ, জেলা সহকারি তথ্য অফিসার জাহারুল ইসলাম, আ’লীগ নেতা কামরুল হাসান বারী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার, আব্দুস সাত্তার, আসাদুজ্জামান প্রমূখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন