উপস্থাপক থেকে রাজনীতিতে

আনিসুল হক। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে যিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি।

এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

এছাড়া সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন আনিসুল হক। সব কিছু ছাপিয়ে এবার রাজনীতির মাঠে আনিসুল। ২০১৫ সালে দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো ঢাকা সিটি (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসেন তিনি। ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পান তিনি।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘আমি সরকারি দলের প্রার্থী নই, দলীয় প্রার্থী নই। কিন্তু, তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন রয়েছে- এটাই আমার শক্তি।’

মেয়র পদে স্বপ্ন দেখান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটা উল্লেখ করে পরিবর্তীতে তিনি বলেছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

‘শেখ হাসিনার এক ফু-তে আমি আনিসুল হক নেতা হয়ে গেলাম’- এমন মন্তব্যও করেন তিনি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ‘চমক’ দেখান সাবেক এই উপস্থাপক।

নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে আনিসুল রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হন আনিসুল।

দায়িত্ব পালনকালে নগরীর উন্নয়নে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেমন আলোচিত হয়েছেন। তেমননি মশা মারা নিয়ে ‘অতি কথনে’ সামলোচনার মুখে পড়েন তিনি।

১৯৫২ সালে নোয়াখালী জেলায় আনিসুল হকের জন্ম । তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তাদের তিনজন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে মোহাম্মদি গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লিমিটেডেরর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

এছাড়া আনিসুল হকের ভাই বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।

উল্লেখ্য, আনিসুল হক গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডনে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসকরা তার মস্তিষ্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস রোগ ধরা পড়ার কথা  জানিয়েছিলেন।

তার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং আশানুরূপ আরোগ্য লাভ করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তারা।

অবশেষ উপস্থাপক থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া আনিসুল হক সবাই ছেড়ে চলে গেলে না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি লন্ডনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।