উৎসব আনন্দে চলছে বাংলা বর্ষবরণ

আজ ১৪২৫ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। রাজধানীসহ সারাদেশে নানা আয়োজনে বরণ করা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এ উৎসবকে। নতুন বছরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীতে রমনা বটমূলে চলছে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও পয়লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে সবচেয়ে বড় আয়োজন রমনা পার্কে। নতুন বছরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সকাল সোয়া ৬টা থেকে রাজধানীর রমনা বটমূলে শুরু হয়েছে ছায়ানটের বিভিন্ন পরিবেশনা। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের সুরে ছায়ানটের শিল্পীরা বরণ করেন নতুন বাংলা বছরকে। গানের মূর্ছনা, কবিতা, আবৃত্তিতে ভোরে ওঠে গোটা রমনা বটমূল চত্বর। সোনালী রঙের পোশাকে ছায়ানটের শিল্পীদের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই প্রতিপাদ্যে, ১৪২৫ বঙ্গাব্দের মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষেদের উদ্যোগে শুরু হবে সকাল ১০টায়।

গতকাল শুক্রবার রাতে আলপনা উৎসবের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, চিত্রশিল্পী রফিকুন্নবীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। এ ছাড়া শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সী মানুষ ছুটে আসেন এই আলপনা আকা দেখতে। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাস্তার উভয় পাশজুড়ে ভোর পর্যন্ত আলপনা অঙ্কনে অংশ নেন প্রায় ৩০০ জন তরুণ শিল্পী।

এ সময় স্পিকার বলেন, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এই উৎসব জঙ্গি-মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসন ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা; যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।