এই চা কখনো পান করেছেন?

সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ চা না হলেই নয়, তাই না? কিন্তু কি চা পান করেন? দুধ চা না লিকার? আচ্ছা এমন কোনো চা যদি থাকে, যা আপনাদের সব অসুখ দূর করে দেবে তাহলে কেমন হয়? সেই চা হল, হলুদ আর আদা মেশানো চা। শুনেই নাক সিটকোবেন না।

আগে জানুন, কি হয় এই আদা আর হলুদ মেশানো চা পান করলে। এই চা নিয়মিত খেলে প্রদাহজনিত সমস্যা দূর হয়, মনোযোগ বাড়ে, ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পেটের সমস্যা কমে। এছাড়াও, হার্টকে ভাল রাখে, ডায়াবেটিস রোধ করে, ব্যাথা কমায়, দুশ্চিন্তা দূর করে এবং ত্বককে ভাল রাখে।

হলুদ-আদা চায়ের পুষ্টিগুণ:
হলুদ-আদা চা পান করলে প্রচুর উপকার মেলে। তার কারণ, এটির মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আইরন, কপার এবং জিঙ্কের মতো খনিজ। কি কি লাভ পাওয়া যায় এই চায়ের থেকে? এই চা তাদের জন্য খুবই উপকারি যারা কোনো কারণে দৈহিক আঘাত পেয়েছেন, হজমে সমস্যা হচ্ছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, হাই কোলেস্টেরল, মানসিক সমস্যা এবং চুলকানি বা ঘা দ্বারা আক্রান্ত, এমনকি যাদের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি তাদেরও এই পানীয় পান করা উচিত। এছাড়াও, এই চা পান করলে নানা রকমের ভয়ঙ্কর সব অসুখ দূর হয়। যেমন…

হার্ট ভাল থাকে:
বেশ অনেকগুলি সমীক্ষায় দেখা গেছে আদা এবং হলুদের মধ্যে উপকারি বেশ কিছু উপাদান রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখে।

প্রসঙ্গত, এলডিএল কোলেস্টেরল মূলত ধমনী এবং রক্তনালিতে রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে। এরফলে হার্টের সমস্যা দেখা যায়, যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে:
আদা যে মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকরি, তা তো আমরা সকলেই জানি। আর হলুদ এবং আদা দিয়ে তৈরি এই চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় স্নায়ুর কাজে সম্পন্ন ঘটে। এরফলে, মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে মস্তিষ্কের টিস্যুকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত ছাপ পরে না।

বেদনানাশক উপাদান রয়েছে:
হলুদ-আদা মিশ্রিত চায়ের মধ্যে কারকিউমিন এবং জিঞ্জেরল নামক দুটি উপাদান থাকে, যা খুব সহজেই যে কোনও ব্যাথা দূর করতে পারে। এছাড়াও এই দুই উপাদান প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করতে পারে, যা হাঁটু, কনুই, কাঁধ, কোমর ইত্যাদির ব্যাথা দূর করে। সেই সঙ্গে মাংসপেশির ব্যাথা এবং টিস্যুর কোনও সমস্যা থাকলে তাও কমায়।

ক্যান্সার রোধ করতে পারে:
আজকাল ক্যান্সার যেন ঘরে ঘরে। অথচ তার চিকিৎসা যেমন খরচাসাপেক্ষ, তেমনি একে পুরোপুরি কাবু করাও মুশকিল। তাই আগে থেকে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে তা আমাদের জন্যই ভাল। আদা এবং হলুদ, ক্যান্সার রোধ করতে যে সক্ষম, তা বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। আদা নানা ধরণের ক্যান্সারের উপসর্গ দূর করতে পারে। বিশেষ করে পেটের ক্যান্সার। অন্যদিকে হলুদও ক্যান্সার রোধে দারুণ কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে:
হলুদ এবং আদার যে কত গুণ তা তো আগেই বলেছি। তাই হলুদ এবং আদা যখন একসঙ্গে মিশিয়ে চা বানানো হয়, তখন তার কত ক্ষমতা হতে পারে, তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন? আসলে হলুদ এবং আদা-এই দুই উপকরণ জীবাণুনাশক, ছত্রাকনাশক এবং সংক্রমণবিরোধী হওয়ায় এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথার মতো সমস্যাগুলোকেও দূর করতে পারে।

ত্বকের যত্নে কাজ দেয়:
হলুদ ত্বকের যত্নে দারুণ কাজ দেয়। যেমন- ব্রণ দূর করে, দাগ ছোপ দূর করে, চুলকানি দূর হয়। এছাড়াও ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। হলুদ-আদা চায়ের মধ্যে জীবাণুনাশক উপাদান থাকায় এটি ত্বককে যে কোনও রকম সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও, এই চা নতুন কোষ তৈরি হতে সাহায্য করে, ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।

হজমে সাহায্য করে:
আদার মধ্যে প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করার মতো উপাদান উপস্থিত রয়েছে, যা পেট ভাল রাখতে সাহায্য করে, এছাড়াও, বমিভাব দূর করতে পারে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি পেট ব্যাথা, পেট ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও দারুণ কাজে দেয়। একানেই শেষ নয়, হলুদ-আদা চা পেটের যে কোনও সমস্যা দূর করে, পেটের ভিতরে কোনোরকম ঘা হতে দেয় না, গ্যাস, অম্বল প্রভৃতি রোধ করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

ডায়াবেটিস রোধ করতে পারে:
হলুদ-আদা চা ডায়াবেটিস রোধ করতে দারুণ কাজে দেয়। এই চা পান করলে এর দুর্লভ উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে। ফলে, ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়। একই সঙ্গে ইনসুলিন এবং গ্লকোজের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কিভাবে বানাতে হয় হলুদ-আদা চা:
এই চা বাড়িতে বানানো খুবই সহজ। হলুদ-আদা চা বানাতে গেলে লাগবে তাজা আদা, হলুদ, লেবু, মধু এবং গোলমরিচ। গোলমরিচ, হলুদের গুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে যাতে হলুদের পুরো গুণ শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া, লেবু এবং মধু ব্যবহার করার মূল কারণ হল, যাতে চায়ের স্বাদ বজায় থাকে। এছাড়াও, মধু এবং লেবুর মধ্যে প্রচুর ঔষধি গুণ বজায় থাকে। উপকরণ- ১ কাপ জল ১ চা চামচ আদা বাঁটা এক চা চামচ হলুদ বাঁটা এক চা চামচ মধু অথবা লেবুর রস এক চা চামচ গোলমরিচ।

বানানোর পদ্ধতি: ১. এক কাপ জল ভাল করে ফোঁটাতে হবে। ২.এবার আদা এবং হলুদ বাঁটা দিতে হবে, আঁচ কমিয়ে কিছুক্ষণ ফোটাতে হবে। ৩.এবার ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। ৪.এবার ছেঁকে নিতে হবে। ৫.এবার গোল মরিচ, লেবুর রস, মধু মেশাতে হবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেল হলুদ-আদা চা।