এই নারীর নামে হাজার শিশুর নামের রহস্য কী?

অ্যালিস খুব বিখ্যাত কোন সংগীত বা সিনেমা তারকা নন। খেলাধুলাতেও তার তেমন কোন অবদান নেই। তারপরও লাইবেরিয়ায় এক হাজারের বেশি কন্যা শিশুর নাম রাখা হয়েছে তার নামেই।

পেশায় একজন মিডওয়াইফ, অর্থাৎ সন্তান জন্মদান গর্ভবতী মাকে সহায়তা করাই তার কাজ। তার হাতেই মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে এসেছে অসংখ্য শিশু। যাদের একটা বড় অংশই আবার হয়েছে দেশটিতে যুদ্ধ চলার সময়।

তিনি বলছেন, প্রথমবার যখন কোন বাচ্চার ডেলিভারি করলাম তখন সেটি হয়েছিলো যুদ্ধের সময় বন্দুকের নলের মাথায়। সেটা ১৯৯০ সালের ঘটনা। এক নারী চিৎকার করছিলেন।

একজন যোদ্ধা এসে বললো, তুমি যদি ডেলিভারি করাতে যাও এবং এই নারীর কিছু হলে আমি দু’জনকেই গুলি করে মারবো। বাচ্চাটি ডেলিভারি করে তাকে মুড়িয়ে মায়ের বুকে দিলাম যাতে বুকের দুধ খাওয়াতে পারে। এটাই আমার প্রথম কোন বাচ্চাকে ডেলিভারি করানোর অভিজ্ঞতা।

মিডওয়াইফ হিসেবে কাজ শুরুর সময় থেকে অ্যালিস জানতেন হয়তো কিছু বাচ্চার নাম রাখা হবে তার নামেই। কিন্তু তাই বলো এতোটা হবে সেটা ভাবতে পারিনি। এটা আমাকে দারুণ আনন্দ দেয়। এটা আমাকে অনুভব করায় যে আমি তাদের একটি অংশ।

তিনি জানান, তার হাত দিয়ে জন্ম নেয়া কন্যা শিশুদের অনেকের যেমন নাম রাখা হয়েছে অ্যালিস (Allice) তেমনি ছেলে শিশুদের অনেকের নাম রাখা হয়েছে এলিস (Ellis)। আবার মেয়েদের মধ্যে যাদের নাম অ্যালিস রাখা হয়েছে পরে তারাও অনেকে মা হয়েছেন।

মজার বিষয় হলো, তাদেরও অনেকের নাম রাখা হয়েছে এই নারীর নামের সাথে মিল রেখে। এদের সবাইকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসে অ্যালিস।

‘আমি আমার সন্তানদের জন্য গর্বিত। কারণ তারা আসলেই চমৎকার। যখনই কমিউনিটিতে কোথাও যাই সবাই ডাকতে থাকে। কেউ আন্টি, কেউ দাদী বা নানী বলে ডাকে। আমার দারুণ লাগে।’

অ্যালিস বলেন, তিনি যখন মারা যাবেন তখন কবরে গিয়েও তিনি দারুণ আনন্দে থাকবেন। অনেক কঠিন সময়েও গর্ভবতী নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এমনকি যখন ইবোলা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলো তখনও।

‘এটা ছিলো ভয়ংকর। এমনকি আমার নিজের সন্তানকেও একটি ছোট ঘরে নিয়ে রেখেছিলাম। এমনকি আমার ভাই এসে বললো অ্যালিস তুমি এখন অনেক ঝুঁকিতে আছো। কারণ তুমি ইবোলা নিয়ে কাজ করছো।’

তিনি বলেন, তিনি খুব যে সাহসী তা নন, কিন্তু ওই সময় ঈশ্বরই তাকে শক্তি যুগিয়েছিলো। মিডওয়াইফ হিসেবে আমি অন্যদের সহায়তা করার প্রশিক্ষণ পেয়েছি। তাই চুপ করে থাকাটা আমার কাজ নয়। মৃত্যু পর্যন্তই আমাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

অ্যালিস বলেন, মিডওয়াইফের কাজ খুব সহজ নয়। ভালো মিডওয়াইফ হওয়াটাও সহজ কাজ নয়। শনি ও রোববার আমার ছুটির দিন। কিন্তু সেই ছুটিও আমার কখনো নেয়া হয় না। আমি কৃতজ্ঞ ঈশ্বরের কাছে যে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আমি পেয়েছি। বিবিসি বাংলা।