এই মানুষটির বিষয়ে জানলে অবাক হবেন, সামনে দাঁড়ালেই বলে দিতে পারে বয়স
ঘড়ি-পাগল এই মানুষটির বিষয়ে জানলে আশ্চর্য হবেন। শহরের পুরনো কোনও ঘড়ির সামনে দাঁড়ালেই তিনি বলে দিতে পারেন ঘড়ির বয়স, তার কলকব্জা। এমনকী, ঘড়ির নির্মাতা সংস্থার নামও।
কলেজ স্ট্রিটের একটি ছোট ঘরে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতদিন ঘড়ি সারাইয়ের কাজ করেন স্বপন দত্ত। ঘরে সঙ্গী বলতে ছোট টাইম পিস থেকে পেল্লাই ঘড়ি।
পাঁচ পুরুষের এই ব্যবসায় তাঁর অন্যতম পাওনা শহরের ‘বড় মানুষে’র দেখা পাওয়া— হগ মার্কেটের (নিউ মার্কেট) ঘড়ি। তাঁর কথায়, ‘‘ঘড়ি তো নয়। এ যেন শতাব্দীর ঠাকুরদা। বয়সে সবচেয়ে বড় মানুষ। নিউ মার্কেটে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধুকপুক করে বৃদ্ধ মানুযের মতোই চলছিল ঘড়িটি। বড় মায়াময় তার বেজে ওঠার ছন্দ। এটা শহরের সবচেয়ে ভাল ঘড়ি।’’
লন্ডনের ‘জিলেট অ্যান্ড জনস্টনে’র তৈরি নিউ মার্কেটের ঘড়িই শুধু নয়, ইংরেজ, পর্তুগিজদের তৈরি ঘড়ি সারিয়েছেন তিনি। স্বপন বলেন, ‘‘ধর্মতলা চার্চের ঘড়ি, জোড়া গির্জার ঘড়ি তো আছেই, এছাড়া, ব্যান্ডেল চার্চ, শ্রীরামপুরে পর্তুগিজদের গির্জা, শিবপুর বি ই কলেজের ঘড়ি, বর্ধমানে রাজাদের কাছাড়িবাড়ির ঘড়ি, সব কিছুর প্রাণভোমরা আমারই হাতে।’’
পঞ্জাবের কপূরথালা, গোয়ার পুরনো বাজারে ‘হেরিটেজ’ ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাঁরই। লেকটাউন এবং ভিআইপি’র সংযোগস্থলে কয়েকবছর আগে যে বড় ঘড়ি বসানো হয়েছে, সেই ঘড়িরও সূচনা তাঁরই হাত ধরে। স্বপন বলেন, ‘‘পুরনো ঘড়ির সামনে দাঁড়ালে মন চলে যায় অতীতে। কত বছর আগে তৈরি এই সমস্ত ঘড়িকে যখন স্পর্শ করি, তখন পুরনো ইতিহাস আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে। নিজেকে মনে হয় আমি সেই ইতিহাসের ধারক।’’
প্রায় ১০০ বছর আগে এই শহরে স্বপনের প্রপিতামহ ধরণীধর দত্ত ‘কুক অ্যান্ড কেলভিন’ সংস্থায় কারিগরের কাজ করতেন। হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা ধরণীধর সম্ভবত কোনও নবাব বা জমিদারের ঘড়ি সারিয়ে খুব তারিফ পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই এই পরিবারের সদস্যদের ঘড়ি-পেশায় আসা বলে স্বপনের ধারণা।
স্বপন জানান, ১০০ বছরেরও বেশি আগে জাহাজে চেপে ইংল্যান্ডের ‘বিগ বেন’ এর আদলে নিউ মার্কেটের ওই ঘড়ি এসে পৌঁছয় কলকাতায়। সত্তরের দশকের কোনও এক সময়ে তাঁর বাবা পতিতপাবন দত্তের হাত ধরে তিনি ওই ঘড়ি সারাতে এসেছিলেন।
এখনও ওই ঘড়ি অসুখে পড়লে কলকাতা পুরসভা থেকে তাঁরই ডাক পড়ে। পতিতপাবন নিজেও ঘড়ির কারিগর ছিলেন। এছাড়াও তিনি নিজে ঘড়ি সারানোর
ব্যবসাও করতেন। স্বপনের দুই পুত্রের মধ্যে সত্যজিৎ এই পেশায় যুক্ত। তারপর? স্বপন বলেন, ‘‘সত্যজিতের পর এই পেশায় আমাদের পরিবারের আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না। তেমন কেউ নেই।’’
ফলে, তার আর পর নেই?
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন