একই স্ত্রীকে পাঁচবার তালাক দিয়ে ছয়বার বিয়ে করেন তুফান!
বগুড়ায় ধর্ষণের শিকার এক ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোচনায় আসেন তুফান সরকার। এরপর একে একে উঠে আসে তার আরো নানা অপকর্মের গল্প।
এবার জানা গেল সেই তুফান নাকি নিজের স্ত্রী আশা খাতুনকেই বিয়ে করেছে ছয়বার!
জানা যায়, ৯ বছরের দাম্পত্যজীবনে তুফান সরকার স্ত্রী আশাকে পাঁচবার তালাক দিয়ে পুনরায় ৬ বার বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্যকলহ লেগেই ছিল। কথায় কথায় নিজেরা মারামারি করতেন। এসব কারণে তুফান ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিত। আবার মৌলভী ডেকে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেন। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুফান সরকার নিজেই পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছে।
বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে তুফান সরকার। বড় ভাই বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার। স্ত্রীর বড় বোন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। আর নিজে জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহবায়ক। মোট কথা ক্ষমতার দাপটে বগুড়ায় এক ভয়ংকর নাম এই তুফান সরকার।
যদিও তুফানের উত্থান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। বগুড়ায় জুয়ার আসর দিয়ে তার অবৈধ আয়ের যাত্রা শুরু। এরপর মাদক ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বগুড়ার মাদক রাজ্যের নিয়ন্ত্রক।
বড় ভাইয়ের সুবাদে রাজনীতিতে নাম লেখিয়ে পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শহর শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেন। এরপর শুরু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স ব্যবসা। ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা রাস্তায় নামানোর আগে প্রতিটির জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা নজরানা দিতে হয় তুফানকে। হিসাব করলে দেখা যায় বগুড়া শহরে বর্তমানে ২০ হাজার ব্যাটরিচালিত রিকশা চলছে। সেই হিসাবে কি পরিমাণ চাঁদা তিনি আদায় করেছেন তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আর প্রতিদিন এসব রিকশা থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা আছেই। এতে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার রিকশা থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা তুফানের দরবারে চলে যায়। গরিব এসব রিকশাচালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে কোটিপতি এখন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে করা দুটি মামলাসহ তুফান সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ফেনসিডিলসহ একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৩ সালে যুবদল নেতা ইমরান হত্যা মামলারও আসামি তিনি।
গ্রেফতারের পর ধর্ষণ নিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুফান সরকারের দেয়া তথ্য মতে, ভর্তির কথা বলে ওই স্কুলছাত্রীকে গাড়ি পাঠিয়ে নিজের বাড়িতে ডেকে আনে তিনি। পরে কাগজপত্র সই করার নাম করে বেডরুমে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তুফানের পাঁচ বন্ধু পাহারায় ছিল। ধর্ষণের পর তাকে জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়ানো হয়।
পুলিশের কাছে তুফান সরকারের ভাষ্য, ধর্ষণের পর ওই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় আতিকের সহায়তায় রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ আনিয়ে কিশোরীকে খাওয়ানো হয়। তারপর তুফান, আতিক ও জিতু প্রাইভেট কারে কিশোরীকে বাসায় পৌঁছে দেয়। তারপর তুফান ঢাকায় যায়।
তুফান পুলিশকে আরও বলেছে, বিষয়টি তার স্ত্রী আশা জেনে যায়। ২৮ জুলাই তার স্ত্রী আশা খাতুন, তার বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, তুফানের শাশুড়ি রুমি, তুফানের বন্ধু আতিক, দীপু, রুপম, শিমুল ও মুন্না কৌশলে ওই স্কুলছাত্রী ও তার মাকে ডেকে আনে। সেখানে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার পাশাপাশি রড দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় তুফান নিজের বাসায় ঘুমিয়ে ছিল বলে দাবি করে।
এদিকে তুফান সরকারকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বগুড়ার জেল সুপার মোকাম্মেল হক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন