একজন হাবিবুর রহমান ও পুলিশ বাহিনীর প্রমিথিউস
প্রথাগত ও প্রচলিত সকল শৃঙ্খল ভেঙে মানুষের কাছে গিয়েছেন, বুকে টেনে সাহস যুগিয়ে ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণের ধারণা বদলে দেয়া ‘প্রমিথিউস’ যিনি, তিনি আর কেউ নন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
বাংলাদেশের মানুষ যেমন পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়েছেন, তেমনি ঢাকাবাসী পেয়েছেন একজন হাবিবুর রহমানকে। তাকে ডিএমপি’র ৩৬তম কমিশনার নিয়োগ দেওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই মহানগরের মানুষ বুকে বল পেয়েছেন।
হাবিবুর রহমান এমনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা-যিনি তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততার গুণে পৌঁছে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়, আর আমাদের পুলিশ বাহিনীকে করেছেন গৌরবান্বিত। পুলিশ বিভাগে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। এছাড়া তিনি দুইবার সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন কর্মঠ ও নিবেদিত উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বাইরে তিনি একজন সফল ক্রীড়া, সংগঠক, লেখক, গবেষক, সমাজ সেবক এবং বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘ডিটেকটিভ’ এর সম্পাদক। তবে বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন হাবিবুর রহমানের বড় গুণ তিনি একজন আদর্শ ও মানবিক ব্যক্তিত্ব: যা তাকে সবকিছু থেকে এগিয়ে রেখেছেন।
সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজ বদলের হাতেখড়ি: হাবিবুর রহমান ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন। কলম তুলে নিয়েছিলেন সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে। তাঁর ছোট ছোট প্রতিবেদনে স্থান পেতো সমাজের জরাজীর্ণতা ও সাধারণ মানুষের বঞ্চনা। সাংবাদিকতা পেশা থেকেই হাবিবুর রহমানের লেখালেখির হাতেখড়ি এবং এটি পেশাগত জীবনে তাকে দিন দিন উচ্চতর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করছে।
গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ১৭তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। সারদাতে মৌলিক প্রশিক্ষণকালে নিজের নেতৃত্ব ও সৃজনশীলতা দিয়ে প্রশিক্ষণ স্যুভেনির আমার হলো সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেখানে এই তরুণ পুলিশ কর্মকর্তার গবেষণালব্ধ লেখনীতে স্থান পায় বাংলাদেশ পুলিশের শেকড়সন্ধানী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কিত পথনির্দেশনা। যত ব্যস্ততাই থাক, লেখালেখির নেশা তাকে পিছু ছাড়েনি। পুলিশের ঐতিহ্যবাহী মাসিক ম্যাগাজিন ‘ডিটেকটিভ’ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এটির গুণগত, ভাষাগত ও প্রকাশনাগত আমূল পরিবর্তন এনে এটিকে পুরো পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি সমৃদ্ধ মুখপত্র হিসেবে হাজির করেছেন।
২০০৯ সালে ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) পদে থাকাকালীন তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন যার মাধ্যমে সর্বপ্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা প্রকাশ্যে আসে বেশ বড় পরিসরে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’ যা দেশের যে কোনো আধুনিক প্রাইভেট ব্লাড ব্যাংকের মতোই উন্নত সেবাদানে সক্ষম। পুলিশ ব্লাড ব্যাংক বর্তমান শুধু পুলিশ সদস্যদেরই রক্ত সরবরাহ করছে না, যে কোন প্রয়োজনে অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়াচ্ছে।
২০১২ সালে হাবিবুর রহমান ঐতিহ্যবাহী ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ঢাকা জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অভিনব সব কলা-কৌশল অবলম্বন করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমগ্র জাতির সম্মুখে চিরস্মরণীয় করে রাখতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অবস্থিত টেলিকম ভবনের পাশে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন।
এটি ২০১৩ সালে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং ২০১৭ সালের পুলিশ সপ্তাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামসহ নানা স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত আছে। ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ গ্রন্থ সম্পাদনা করে হাবিবুর রহমান কাগজে-কলমে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকাকে ইতিহাসে স্থান করে দেওয়ার জন্য অবদান রাখেন। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে পুলিশের সেইসব অকুতোভয় অবদানসমূহকে প্রমাণ সাপেক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হিসেবে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই বিরল কাজের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে হাবিবুর রহমানের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। ডিএমপিতে কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পর ‘মেসেজ টু কমিশনার’ সেল চালু করে রাজধানীবাসীর প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। এই সেলের মাধ্যমে যেকোনো সময় কমিশনারকে মেসেজ প্রদান করে যেকোনো আইনগত সেবা নিতে পারছেন রাজধানীবাসী।
তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রাদিঘলিয়ায় রাবেয়া আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত করে নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছেন বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব হাবিবুর রহমান।
বুক তাঁর অস্পৃশ্যের আশ্রয়স্থল : ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালে সাভারে বসবাসরত ২০ হাজারেরও বেশি বেদে জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে বিভিন্ন কর্মমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন হাবিবুর রহমান। তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে প্রাথমিকভাবে ১০৫ জন বেদে নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে পোড়াবাড়িতে কর্মসংস্থানের জন্য মিনি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
সাপ খেলা দেখানোর পেশা থেকে ফিরিয়ে এনে ৩৫ জন বেদে যুবককে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যেকের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা, কোচিং সেন্টার ও কম্পিউটার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে বেদে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার অতিরিক্ত সুযোগ তৈরি করা, সরকারি সহযোগিতায় ১৮টি জরাজীর্ণ রাস্তা মেরামত করা, একটি মসজিদ নির্মাণ করা এবং স্থানীয় বেদে জনসাধারণের জন্য একটি পাকা ঈদগাহ নির্মাণ করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন।
তিনি উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে সাভারের বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের জন্য ৩০০টি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সাভারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মুন্সীগঞ্জের বেদে শিশুদের জন্যও গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল ও কম্পিউটার সেন্টার।
২০২২ সালে মুন্সীগঞ্জের ১৯টি বেদে পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে যার ফলে তাদের মনে এখন স্বস্তির হাওয়া। বর্তমানে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও গাজীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নাটোরের সিংড়া এলাকায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনমুখী কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জের বেদেদের জন্য ৫৯টি ঘর নির্মাণ করে হাসি ফুটিয়েছেন ভাসমান মানুষের মুখে। বলতে গেলে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৩৬ লাখ বেদে ও মান্দা সম্প্রদায়ের কাছে তিনি যেমন হয়ে উঠেছেন আশার বাতিঘর তেমনি তিনি এই জনগোষ্ঠীর সাড়ে চারশো বছরের অস্পৃশ্য ও গ্নানিময় জীবনের মুক্তিদূতও।
ভাষাবিদ, লেখক ও নাট্যকার : বেদেদের উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে হাবিবুর রহমান প্রত্যক্ষ করেন, এই জনগোষ্ঠীর সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে আলপচারিতায় একটি ভাষা ব্যহার করেন। বেশ কিছুদন যাবৎ এটি প্রত্যক্ষ করতে থাকেন এবং এই দুর্বোধ্য ভাষাটির প্রতি কৌতূহলী হন। তিনি বেদে জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে পরিচিত কযেকজনকে ডেকে জানতে পারলেন যে এটি বেদে জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা যার নাম ‘ঠার’। তিনি ভাষাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করেন এবং বেশকিছু শব্দ ও বাক্য নিজের নোটবুকে লিখে রাখেন। এরপর খোঁজ করতে থাকেন এই ভাষাটি আসলে কীভাবে এলো, কারা ব্যবহার করছে এবং বাংলাদেশের কোন কোন প্রান্তে এই ভাষাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এটি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে ‘ঠার’ ভাষাটি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মধ্যে একটি এবং এই ভাষাটি সংগ্রহ বা সংরক্ষণে তেমন কোনো কাজও হয়নি।
তিনি আরো জানতে পারেন, এই ভাষাটি আসলে কোনো লেখ্য রূপ নেই এবং একটি কথ্য ভাষা। তাই বলে সাড়ে চারশ বছর যাবৎ বসবাস করে আসা একটি জনগোষ্ঠীর ভাষাটি অযত্নে বা অবহেলায় এভাবে হারিয়ে যাবে এই ভাবনা তাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে। তিনি বিভিন্নভাবে ভাষাটি সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট অনেকের মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখলেন যে আসলে যথাযথ তথ্য উপাত্তের অভাবে কেউই এটির গভীরে প্রবেশ করতে পারছেন না। ফলে নিজেই শুরু করলের বিস্তর গবেষণা। ভাষা বিজ্ঞানের ওপর দক্ষতা না থাকায় প্রথমে তাকে বেশি কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরেরসহায়তায় ভাষা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রপ্ত করতে সক্ষম হন তিনি।
বিলুপ্তপ্রায় ঠার ভাষাটির আদ্যোপান্ত উদ্ধার করে এটির পূণর্গঠন, পঠন ও ব্যবহারিক রূপ দিতে প্রায় আট বছর সময় লেগে যায়। এই আট বছরের ব্যবধানে কর্মজীবনের হাবিবুর রহমান ঢাকা পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) হিসেবে দয়িত্ব পালন করেন, পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ডিআইজি (অ্যাডমিন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান পদে আসীন হবার আগে ২০১৯ সালের ১ মে থেকে তিনি ঢাকার রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা রেঞ্জের ১৩টি জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এক বিজ্ঞপ্তি মারফত রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়।
অবশেষে গবেষণাগ্রন্থ ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ নামক এই অসাধ্য সাধনের কাজটি শেষ করেন বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক বাংলাদেশ পুলিশের তৎকালীন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে দেশবরেণ্য গুণীজনদের উপস্থিতিতে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। বাংলা ভাষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে হাবিবুর রহমানই প্রথম এমন কোনো গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটির প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন আয়োজিত এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
দীর্ঘ ৮ বছরের নিরন্তর গবেষণার ফসল বেদে জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ‘ঠার’ নিয়ে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর থেকেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এরই ফলশ্রুতিতে এই গ্রন্থটি মাতৃভাষা সুরক্ষা, উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ সালের আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদকে ভূষিত হন হাবিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় অ্যানালাইসিস করে নির্মম সত্য ঘটনাটিকে সমগ্র জাতির কাছে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন তিনি। অবশেষে এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞের পূর্ণাঙ্গ ঘটনার ওপর ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নামে একটি মঞ্চনাটক তৈরি করেন যা এক বছরেই ১০০ বারেরও বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে, এমনকি এটি এখন বিশ্ব রেকর্ড করতে চলেছে। কারণ ইতিহাসে আর কোনো মঞ্চনাটক এক বছরে ১০০ বারের বেশি মঞ্চস্থ হয়নি। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক কিছু ছবি ও ছবির অন্তরালের গল্প নিয়ে ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’ নামে একটি ফটো অ্যালবাম প্রকাশ করেন। অন্যদিকে পুলিশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উক্তি ও বক্তব্য নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর কথা ও কলমে পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশনাধীন একটি বইয়ের সংকলন ও সম্পাদনা করছেন তিনি। যার ভূমিকা লিখেছেন স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৩ জানুয়ারি ২০২৩-এ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর লিখিত পত্র নিয়ে হাবিবুর রহমান সম্পাদিত ‘চিঠিপত্র: শেখ মুজিবুর রহমান এবং এর ইংরেজি সংস্করণ Letters of Sheikh Mujibur Rahman’ শীর্ষক দুটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, দুটি বইয়ে কো-এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন তাঁরই সহকর্মী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত করিম।
লেখক:মাসুক মিয়া পিপিএম
এডিসি, মিরপুর জোন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন