একটা পা দিয়ে লিখেই স্বপ্নপূরণ করতে চায় তামান্না
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলীর মেয়ে তামান্না নূরা। এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
অন্যদের চেয়ে একদম ব্যতিক্রমী সে। কারণ জন্মগতভাবে তার দুই হাত নেই, এছাড়া দুই পায়ের বদলে তাকে একটি পা নিয়েই চলতে হয়।
খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, পড়াশুনা থেকে শুরু করে জীবনের সব কাজ তাকেই করতে হয়।
ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি। নানা প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে হয়েছেন এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার যে একটি পা রয়েছে সেই পা-ই এখন তার ‘স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার’।
এ বিষয়ে তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, জন্মের পর থেকে অর্থাভাবের পাশাপাশি সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে হয়েছে তার মেয়েকে। তবে কখনো আমরা ভেঙে পড়িনি।
তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করেই তামান্নার মা তাকে একটি পায়ের উপর ভর করে সব ধরনের শিক্ষা দিতে থাকে। তামান্না অক্ষরজ্ঞান তার মায়ের কাছ থেকেই শেখে। সে সময় বাড়ি থেকে দূরের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়মিত স্কুলে পাঠানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
তামান্নার বাবা জানান, তাই স্থানীয় আজমাইন এডাস স্কুলে তাকে নার্সারিতে ভর্তি করানো হয়। তামান্নার শ্রবণ ও মেধাশক্তি এতো ভালো ছিল যে একবার শুনলে বিষয়টি সে দ্রুত আয়ত্ব করতে পারত।
রওশন আলী আরও জানান, অক্ষর লেখা, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরিয়ে লেখা, তারপর কলম ধরিয়ে লেখা আয়ত্ব করে সে। ধীরে ধীরে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চিরুনি, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল আঁচড়ানো সবই সে আয়ত্ব করে ফেলে। তার দক্ষতা সবার নজরে আসে।
তামান্না নূরা বলেন, ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি। সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে তামান্না বলে, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ভালো ফলাফল করতে পারি। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে শিক্ষক, বাবা-মা, সহপাঠীসহ সবার কাছে দোয়া চান তামান্না।
জানা যায়, চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে কে হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তামান্না। স্থানীয় বাকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠীদের ধারণা, প্রাথমিক বৃত্তি ও জেএসসি’র ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসএসসিতেও ভালো ফলাফল করবে তামান্না।
তামান্নার শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে তামান্না কেজি, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতিটি ফলাফলে মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছে। পাশাপাশি ‘এডাস বৃত্তি পরীক্ষায়’ প্রতিবছরই বৃত্তি পেয়েছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে পিইসি এবং ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে তামান্না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন