একটি গুলি পড়লে পাল্টা জবাব : মিয়ানমারকে বিজিবি
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কোনো গুলি আসলে পাল্টা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর বাংলাদেশে আসতে সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর সে দেশের সীমান্তক্ষী বাহিনীটির গুলি চালানোর পর এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিচালক আবুল হোসেন।
রবিবার বিকালে কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ঘুমধুমে বিজিবি ক্যাম্প পরিদর্শন করে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিজিবি প্রধান। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকারও নির্দেশ বিজিবি প্রধান।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বাধীন দেশের ভূখণ্ডে একটি গুলি পড়লে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। আমরা পরিপূর্ণ ভাবে যেকোন সমস্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছি। অতিরিক্ত ১৫ হাজার বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কমান্ডার কর্ণেল আলিফ, কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার আনোয়ারুল আজিম, বান্দরবান জেলা প্রশাসক বাবু দীলিপ কুমার বণিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল প্রমুখ।
গত বুধবার রাতে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ১২ নিরাপত্তা কর্মীসহ ৯৬ জনের প্রাণহানির পর স্বাধীন রোহিঙ্গা রাজ্য প্রতিষ্ঠান জন্য আন্দোলনে থাকা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (এআরএসএ) এক টুইট বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করে।
এরপর শুক্রবার ও শনিবার রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মাওন তাও, বুথিডাং ও রাথেডংসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ সময় তারা ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু, রহমতের বিল, জলপাইতলী, ধামনখালী, কলাবাগান, তুমব্রু উত্তর পাড়া, তুমব্রু পশ্চিম পাড়ায় অবস্থান নেয়।
শনিবার দুপুরের পরে সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের ওপর মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ বিজিপি গুলি চালালে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রবিবার সকালে সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া ও তুমব্রু গ্রামে প্রচ- গুলিবর্ষণ হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার নজরদারি রাখতে দেখা গেছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার কৌশল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন, সীমান্তের তুমব্রু, ঘুমধুম ও পালংখালী নাফনদীর তীরবর্তী অঞ্চলের গ্রামবাসীরা বসবাস করছে। বিশেষ করে আতঙ্কে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত জনপদের মানুষও।
বিজিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূখ-ে কোনো মর্টার শেল পড়েছে কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে সীমান্ত পরিদর্শনে যাওয়া ম্যাজিস্ট্রেট মফিদুল আলম বলেন, মিয়ানমার পুলিশ বিজিপির ছোড়া তিনটি গুলি তুমব্রু বাজারে এসে পড়েছে। তবে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।
বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে কিছু সমস্যা হওয়ায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্তে জড়ো হয়েছে। কিন্তু কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সীমান্তে আরও জনবল বাড়ানো হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মঞ্জুরুল হাসান খান জানিয়েছেন, তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নাফ নদীর ওপারে সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে।
মিয়ানমার মংডুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা কেফায়ত উল্লাহ জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। হুরটেইল কাইল্ল্যা ভাঙ্গা গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। শত শত লোকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। মেয়েদের নিয়ে গেছে নির্জন স্থানে। এই অবস্থায় মিয়ানমার ঢেকিবুনিয়া তুমব্রু থেকে এসে এপারের ঘুমধুম এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নরনারী শিশু।
বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মরিয়ম বেগম (৫৫) বেগম জানান, তার স্বামী ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। তাই তিনি পালিয়ে এসেছেন।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে সময়ে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন