একুশ আগস্টের ভিকটিমদের পাশে রয়েছেন শেখ হাসিনা
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ভিকটিমদের ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সংঘটিত ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ডে যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের পরিবার ও আহতদের পাশে সবসময় রয়েছেন ওই হামলার প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। হতাহতের পরিবারের সদস্যদের বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা, ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ পড়াশুনার খরচ, চিকিৎসা ও ওষধপথ্যের যোগাড়, ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিট বা সঞ্চয়পত্র কিনে দিয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যয় নির্বাহসহ সব চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছেন সেই সময়কার বিরোধী দলীয় নেতা, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
কেবল তাই নয়, দল ও সহযোগী সংগঠনে পদপদবিতে বসানো, সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন ও নারীদের সংরক্ষিত আসনে এমপি নির্বাচিত করে, বসবাসের জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দিয়ে এবং কাউকে কাউকে সফরসঙ্গী করে রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ নিয়ে ত্যাগের প্রতিদান দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের স্থায়ী অর্থের উৎস হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পরিবার প্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বা ফিক্স ডিপোজিট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর ৬৬ জনের প্রত্যেককে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি প্রতি বছরই ফিক্স ডিপোজিট বা সঞ্চয়পত্র কিনে দিচ্ছেন, যার লভ্যাংশ দিয়ে নিহতের পরিবার বা আহতদের সংসার খরচ ও ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার ব্যয় নির্বাহ হয়। এবছর ১৫ মে-তে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবার ও আহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া, বেশ কয়েকজন নিহত ও আহতের পরিবারের বেকার সদস্যকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য এককালীন অনুদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি দান করে গঠিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের বিভিন্ন সময় বড় অঙ্কের চিকিৎসা খরচসহ প্রতিমাসে আহতদের চিকিৎসা ও আহত-নিহতদের সন্তানের শিক্ষার জন্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালে এই সহযোগিতার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও তা চলছে। অবশ্য জরুরি অবস্থার সরকারের সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে তৎকালীন সরকার ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে রাখার কারণে সেই সময় এই সহযোগিতা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। জানা গেছে, ওই সময় জেলে থেকেও দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মাধ্যমে গ্রেনেড হামলা নিহতের খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বচ্ছল নেতাদের মাধ্যমে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাটি অব্যাহত রাখেন। পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতার কার্যক্রম আবারও পুরোদমে চালু হয়।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে প্রায় দেড় হাজারের মতো শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এরমধ্যে অনেকেই রয়েছেন ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় নিহত বা আহত পরিবারের সদস্য। এছাড়া, ২১ আগষ্টের ঘটনায় আহতদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ওষুধ কেনাসহ চিকিৎসা খরচের জন্য বিভিন্ন অংকের টাকা দেওয়া হয়।
বর্তমানে গ্রেনেড হামলায় ভিকটিম শতাধিক ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও চিকিৎসা খরচ বাবদ মাসে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে বলে ট্রাস্টের কর্মকর্তারা জানান।
এছাড়া, আহত অনেককে মনোনয়ন দিয়ে সংসদ সদস্য করেছেন। কয়েকজন নারী নেত্রীকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করেছেন। আর্থিক বা অন্য কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই গত ৯ বছরে এমন অনেককে সফরসঙ্গী করে জাতিসংঘ অধিবেশনসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাষ্ট্র ঘুরিয়ে এনেছেন। আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল এমন কাউকে কাউকে প্রধানমন্ত্রীর কোটা থেকে রাজউকের পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট দিয়েছেন। এছাড়া, অস্বচ্ছলদের জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে মিরপুরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, সেখানে ১৫০০ বর্গফুটের ১০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে নিহতদের পরিবার ও আহতদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ১৯ আগস্ট (রবিবার) ৩১ জনের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদেরও ফ্ল্যাট হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে।
অনুদানের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্টের কর্মকর্তা এস এম কামরুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ এবং আহত-নিহতদের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে প্রতিমাসে তারা বিভিন্ন অঙ্কে টাকা দিয়ে থাকেন।’ পরিবার প্রতি এর পরিমাণ ২ থেকে ১০ হাজার হবে বলে জানান তিনি।
ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নিয়মিতই এসব আহত ও নিহতদের পরিবারের খবরাখবর নেন বলেও জানান লিটু। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবার ও আহতদের নাম ধরে ধরে কে কী অবস্থায় আছে, তার সর্বশেষ খবর আমাদের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। কোনও সময় আহতদের কারও অপারেশন বা চিকিৎসার জন্য বেশি পরিমাণ টাকার প্রয়োজন পড়লে প্রধানমন্ত্রী তার তহবিল বা ট্রাস্টের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন গ্রেনেড হামলায় আহত ধামরাইয়ের সেলিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যে করুণ অবস্থা আমার ছিল ওই সময় শেখ হাসিনা পাশে না দাঁড়ালে হয়তো বেঁচেই থাকতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য তার সাধ্যমত সহযোগিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। সংসার পরিচালনার জন্য ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, সন্তানদের পড়াশুনার খরচের জন্য আরও ১০ লাখ টাকার এফডিআর করে দিয়েছেন। এছাড়া, আগে নগদ দিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঙ্কে তিনি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন।’ বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি , তার চিকিৎসা খরচ হিসেবে প্রতিমাসে টাকা দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
সেলিম জানান, তাকেসহ গুরুতর আহত ২০ জন ও নিহত ১১ জনের পরিবারকে মিরপুরে বিনামূল্যে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৯ আগস্ট) তারা সবাই ফ্ল্যাট বুঝে পেয়েছেন।
এর বাইরেও বিভিন্ন সময় তিনি সহযোগিতা পেয়েছেন উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমার ১৯ বার অপারেশন করতে হয়েছে। এসব অপারেশনের সময় নেত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি। ঘটনার পর নেত্রীর নির্দেশে আমাকে বিদেশ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা ওই সময় বিদেশ যাওয়ার মত ছিল না। তাই দেশেই আমার চিকিৎসা হয়েছে।’
লিটন মুন্সির বোন ইসমত আরা জানান, গ্রেনেড হামলার পর থেকেই শেখ হাসিনা তাদের বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন, যার অর্ধেক তার ভাবী ও সন্তানেরা এবং বাকি অর্থেক বাবা-মা পেয়েছেন। এ বছরও প্রধানমন্ত্রী তাদের দুই পরিবারকে ৫ লাখ করে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দিয়েছেন।
লিটনের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেটা করেছেন, সে জন্য আমরা খুশি। তবে, শুনেছি, তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবারকে ফ্ল্যাট দেবেন। সেটা যদি আমরা পাই, তাহলে বাকি জীবনটা একটু শান্তিতে কাটাতে পারবো।’
গ্রেনেড হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা রফিকুল ইসলামের (আঁদা চাচা) ছেলে মামুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন আমাদের গার্ডিয়ান। আমাদের অন্যদের মতো আর্থিক চাওয়া পাওয়া কখনও ছিল না এবং সেটা আমরা চাইও না। তবে যেসব সমস্যা ছিল তা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছেন। খিলগাঁওয়ে আমাদের বাড়ির জমি নিয়ে সমস্যা ছিল, প্রধানমন্ত্রী তা সমাধান করে দিয়েছেন। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
মহিলা আওয়ামী লীগের নিহত কর্মী রংপুরের রেজিয়া বেগমের ছেলে নুরুন্নবী জানান, তারা পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি দুই বছর আগে তাদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই দ্রুত যেন এই হত্যার বিচার হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার কাছে আমাদের নতুন করে কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। তবে তিনি যেন আমাদের সব সময় খোঁজখবর রাখেন এটাই আমরা চাই।’
হামলায় আহত সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে রাজিয়া কাজল বলেন, ‘ঘটনার পর ওপরে ছিলেন আল্লাহ, আর নিচে ছিলেন আমাদের নেত্রী। তিনি যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন, তাহলে আমাদের মধ্যে অনেকেই এখন জীবিত থেকে কথা বলতে পারতো না, বা পঙ্গু হয়ে থাকতে হতো। নেত্রীর কারণে আমরা স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছি।’
তিনি জানান, ঘটনার পর তো তিনি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করেছেন। অনেককে এখনও তিনি চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ দিচ্ছেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনোর ব্যবস্থা করছেন। অনেক হতাহতের স্বামী, স্ত্রী বা সন্তানদের চাকরি দিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের চাকরি দিয়েছেন। নিজের চিকিৎসার দিকে নজর না দিয়ে, আগে আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। আহত-নিহতের কেউই বলতে পারবেন না যে, প্রধানমন্ত্রী কিছু করেননি। সন্তানের জন্য পিতামাতা যা করেন তিনি সে রকমই করেছেন।
উম্মে রাজিয়া বলেন, ‘একুশ আগস্ট আহতদের মধ্য থেকে আমিসহ অন্য একজনকে তিনি সংরক্ষিত আসনে এমপি করেছেন। আগের সংসদেও আহত একাধিক নারীকে এমপি করেন। এছাড়া, আরও কয়েকজনকে তিনি দলের নমিনেশন দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন