একের পর এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ, অন্ধকারে পুলিশ
ঈদুল আজহার ঠিক আগ মুহূর্তে রাজধানী থেকে অপহরণ হচ্ছেন একের পর এক ব্যবসায়ী। গত ২২ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ছয়দিনে তিনজন ব্যবসায়ী অপহরণের শিকার হয়েছেন। জোর তৎপরতা চালিয়েও এখন পর্যন্ত তাদের কাউকেই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।গত মঙ্গলবার বিকালে বিমানবন্দর সড়কের বনানী ফ্লাইওভারের নিচে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাদাত আহমেদকে (৪৫) তার গাড়ি আটকে কিছু দুর্বৃত্ত অপর আরেকটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় রাতেই ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা (মামলা নম্বর ৬) করেন তার পরিবার।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অপহরণের ছয়দিন পরও তার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি এলিট ফোর্সও। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে র্যাবের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন সাদাতের স্ত্রী। তাকে উদ্ধারে র্যাবের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
সাদাতের বাবা শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, মঙ্গলবার বিকালে ছেলে মেহেদী জামান ও বাসার কেয়ারটেকারকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন সাদাত আহমেদ। বিকাল ৩টার দিকে বনানী ফ্লাইওভারের নিচে একটি মাইক্রোবাস তাদের পথরোধ করে এবং মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন এসে সাদাতকে জোর করে নামিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়।
নাতির বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, মাইক্রোবাসের একজন এসে সাদাতের গাড়ির চালকের আসনে বসেন। দুটি গাড়িই কুড়িল বিশ্বরোডের তিনশ’ ফুট রাস্তা দিয়ে পূর্বাচলে গিয়ে থামে। সাদাতের গাড়িতে ওই সময়ও তার ছেলে মেহেদী ও কেয়ারটেকার ছিলেন। পূর্বাচলে সাদাতের গাড়ি থেকে ওই ব্যক্তি নেমে যান। সাদাত ১৫ মিনিট পর ফিরে আসবেন জানিয়ে তিনি চলে যান। মেহেদীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যান। পরে ওই মাইক্রোবাস নারায়ণগঞ্জের দিকে চলে যায়।
ব্যবসায়ী সাদাতকে অপহরণের পরদিনই রাজধানী পল্টনের ‘খানা বাসমতি’ হোটেলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের করপোরেট কমিউনিকেশনস ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ। এমন অভিযোগে রাতেই পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১৭৩৫) করেন অপহৃতের স্ত্রী শিল্পী আহমেদ।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনও শামীম আহমেদের সন্ধান পাইনি। তবে খানা বাসমতি হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তার দুইটি মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করে তার অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
শামীম আহমেদের স্ত্রী শিল্পী আহমেদ বলেন, বুধবার দুপুরে আমার স্বামী পুরানা পল্টনের অফিস থেকে বের হয়ে ‘খানাবাসমতি’ রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মাঝামাঝি স্থান থেকে কয়েকজন তাকে সাদা মাইক্রোবাসে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশ আমাদের বলছে, তারা ইনেভেস্টিগেশন করছেন। কিন্ত ছয়দিন হতে চললো তারা আমার স্বামীর কোন খোঁজ দিতে পারল না। প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে তাকে তুলে নিয়ে গেল। সিসিটিভি ফুটেজে অপহরণকারীদের চেহারা স্পষ্ট বোঝা গেছে, তারপরও কেন পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছেনা?
এদিকে রোববার বিকালে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আরএমএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে গুলশান থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ।
অনিরুদ্ধ রায়ের ভাগ্নে কল্লোল রায় ওই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরিবারের একটি সূত্র জানায়, রোববার বিকালে গুলশান-১-এ নিজের গাড়িতে ওঠার সময় ৭-৮ জন লোক এসে নিজেদের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, বিকাল ৪টার দিকে গুলশান-১ থেকে অনিরুদ্ধ কুমার রায় নিখোঁজ হয়েছেন বলে জিডিতে বলা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন