এক্সপ্রেসওয়ে দুর্ঘটনা : চালকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ, বাসের ছিলো না ফিটনেস

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঘাতক বাসটির চালক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব জানায়, বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও তিনি নিয়মিত বাস চালিয়ে আসছিলেন। এছাড়া ঘাতক বাসটির কোনো ফিটনেস ছিল না। এরপরও সেটি চালানো হচ্ছিল মহাসড়কে।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে এসব তথ্য জানান র‍্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

তিনি জানান, বাসচালক নুরুদ্দিন গত ২৭ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। বাসটি যাত্রীবোঝাই থাকলেও তিনি দ্রুত পৌঁছানের জন্য বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। পরে বেলা ১১টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষারত একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারের চারজন এবং মোটরসাইকেলে থাকা একজন নারী এবং সাত বছরের এক বাচ্চাসহ ছয়জন নিহত হন। এ ঘটনায় আরও ১০ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জিজ্ঞাসাবাদে চালক নুরুদ্দিন র‍্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি গত ১০ বছর ধরে বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এছাড়া বাসটির কোনো ফিটনেস সনদও ছিল না।

এছাড়া দুর্ঘটনার পর বাসচালক কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে অটোরিকশায় করে আব্দুল্লাহপুর যান এবং সিএনজিযোগে নারায়ণগঞ্জে তার ফুপাতো বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। পরে সেখান থেকে র‍্যাব-১০ এবং র‍্যাব-১১ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

র‍্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরও জানান, এই বাসচালককে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই লুকিয়ে ছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পর চালককে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে একই পরিবারের চারজনসহ দুটি গাড়ির ছয় আরোহী নিহত ও চারজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।

নিহতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলমের স্ত্রী আমেনা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনি (১১), ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২), মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২৬) ও তার ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)।

আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলম (৪২), তার বোন ফাহমিদা আক্তার (১৭), প্রাইভেটকারের চালক হাবিবুর রহমান (৩৮) ও মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়া (৪২)। দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় আহত ব্যক্তিদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় আহত ১০ জনকে এই হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। আহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের মধ্যে গুরুতর। আহত রেশমাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছিল। পরে তারা জানতে পারেন, শুক্রবার বিকেলে সেখানে রেশমার মৃত্যু হয়।