এক কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক মাদরাসা নয়
মহানগরে এক কিলোমিটার, পৌরসভায় দেড় এবং মফস্বলে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটির বেশি মাদরাসা থাকলে তা একীভূত করতে হবে। বাজেটের ভারসাম্যের প্রতি খেয়াল রেখে মাদরাসাগুলোতে পর্যায়ক্রমে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, তাদের দিতে হবে প্রশিক্ষণ। এছাড়া কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
এই চার শর্তে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো ও বেতন-ভাতাদি সংক্রান্ত নীতিমালায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ওই নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বেড়ে যাবে। প্রধান শিক্ষকদের সম্মানী বর্তমানের তুলনায় ২৪০ শতাংশ এবং সহকারী শিক্ষকদের ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা ২৫শ’ আর সহকারী শিক্ষকরা ২৩শ’ টাকা করে সম্মানি পাচ্ছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে তিন হাজার ৪৩৩টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৪৩ শিক্ষক কর্মরত।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষার অন্যান্য ধারার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইবতেদায়ী পর্যায়েও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, আইসিটির মতো বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়গুলো পড়ানো হচ্ছে।
দেখা গেছে, দেশে দুই ধরনের ইবতেদায়ী মাদরাসা আছে। একটি দাখিল বা এর উচ্চতর মাদরাসার সঙ্গে সংযুক্ত, আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র। বর্তমানে এমপিওভুক্ত সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা নির্ধারিত হারে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এসব মাদরাসার প্রধান শিক্ষকরা মাসে ১০ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা মাসে নয় হাজার ৯৮৮ টাকা হারে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, মাদরাসা স্থাপনে অনুমোদন দেয়ার কাজ করবে মাদরাসা বোর্ড। তবে যেকোনো অনুমোদন দেয়ার আগে বোর্ডকে সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। ব্যক্তির নামে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত সিলেবাস বা পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি সহশিক্ষাক্রম কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মহানগর, পৌর ও শহর এলাকার মাদরাসায় কমপক্ষে ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রতি শ্রেণিতে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলক।
মফস্বলের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৫০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। সেখানে ক্লাসপ্রতি ১৫ জন থাকতে হবে। তবে দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকার জন্য এ শর্ত শিথিল। ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় মহানগর/পৌর/শহর এলাকার প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ২০ শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে পাস করতে হবে। গ্রাম এলাকায় সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে ১৫ শিক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে পাস করতে হবে।
প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে মাদরাসার নামে জমি রেজিস্ট্রি করতে হবে। এরপর জমির সেই দলিলসহ মাদরাসা স্থাপনের জন্য আবেদন করতে হবে। বছরের প্রথম তিন মাস কেবল আবেদন নেয়া হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে স্থায়ী আমানত হিসাবে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকার গচ্ছিত থাকার প্রমাণপত্র দিতে হবে।
প্রস্তাবিত মাদরাসার নামে মফস্বল এলাকায় শূন্য দশমিক ৩৩ একর জমি থাকতে হবে। শহর বা পৌর এলাকায় শূন্য দশমিক ২০ একর এবং মহানগর এলাকায় শূন্য দশমিক ১০ একর জমি থাকতে হবে। মাদরাসার নামে রেজিস্ট্রি করা জমির নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের হালনাগাদ দাখিলা থাকতে হবে।
নীতিমালায় মাদরাসা ভবনের ব্যাপারে আটটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- ন্যূনপক্ষে টিনের বেড়াসহ টিনশেড ঘর থাকতে হবে। শিক্ষকের বসার জন্য একটি কক্ষ এবং পাচঁটি শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। শ্রেণিকক্ষের আয়তন হবে মফস্বলে দেড় হাজার এবং মহানগর/পৌর/শহর এলাকায় দুই হাজার বর্গফুটের। শিক্ষকের কক্ষের আয়তন হবে দেড়শ’ বর্গফুটের। বসার জন্য পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, মানসম্মত টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে পর্যায়ক্রমে সংযোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ ও পাঠাগার থাকতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন