এখনও ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে শরণখোলা উপকূলের মানুষগুলো
৩০০ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত বেড়িবাঁধ আতঙ্ক কাটাতে পারেনি সুন্দরবন উপকূলীয় শরণখোলাবাসীর। এখনও ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে উপকূলের মানুষগুলো।
এদিকে সদ্য নির্মিত টেকসই বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ব্লক ধস ও ফাটল। বাঁধের দক্ষিণ সাউথখালীর গাবতলা অংশের নদীর পাড় ভেঙে চলে গেছে মূল বেড়িবাঁধে কাছাকাছি। ভাঙনের কবলে পড়ে যে কোনো সময় বিলীন হতে পারে উপকূল উন্নয়ন এ বেড়িবাঁধ।
এছাড়া একই বাঁধের কুমারখালী ও বটতলা পয়েন্ট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধের ফাটল ও ব্লক ধসের জন্য নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজ ও তদারকিতে কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ি করেছেন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষের বাঁধের সম্ভাব্যতা যাচাই, কাজের সঠিক তদারকি না করা এবং নদী শাসনের ব্যবস্থা না রেখে বাঁধ নির্মাণ করায় তারা নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও তাতে সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত এ জনপদের মানুষের তেমন উপকারে আসছেনা। বেড়িবাঁধ হস্তান্তরের আগে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম দিয়ে এটি তদন্ত করা হোক।
দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকর পরিচালনাধীন বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প সিইআইপি-১ এর ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল ইসলাম নাহিদ জানান, নির্মিত বেড়িবাঁধ এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। ফাটল ও ব্লক ধস সংস্কার করা হবে।
তিনি বলেন, শুরুতে বিশ্বব্যাংক নদীর গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী জরিপ করেছিল। আজকের ভাঙন কবলিত এলাকায় তখন নদী শাসনের প্রয়োজন ছিলনা। তবে নদী শাসনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ২২০ কিলোমিটার বেগের ঘূর্ণিঝড় আর ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় ২০ গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট।
বলেশ্বর নদের তীরে বগী, দক্ষিণ সাউথখালী, উত্তর সাউথখালীসহ পাঁচটি গ্রামের প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নারী, শিশু ও বয়স্ক। গবাদি পশু মারা যায় ১০ সহস্রাধিক। ভেসে যায় মাছের ঘেরসহ আমনের ক্ষেত।
তখন দুর্গত মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাসহ বিদেশিরাও সাহায্য নিয়ে ছুটে আসেন। সর্বহারা মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে সেদিন দাবি জানায়, ত্রাণ নয়, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ।
পরে বর্তমান সরকার ভুক্তভোগীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাগেরহাটের শরণখোলা-মোরলগঞ্জের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান সিএইচডব্লিউ নামের চীনের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্ধিত সময় অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। ৬২ কিলোমিটার বাঁধের শরণখোলার সুন্দরবন সংলগ্ন বগী গ্রাম থেকে মোরলগঞ্জের বরিশাল গ্রাম পর্যন্ত মোট ২৬ কিলোমিটার নদী তীর এলাকা কম-বেশি ভাঙন কবলিত। তবে বাঁধের অধিক ভাঙন প্রবণ এলাকা হচ্ছে-বগী, গাবতলা, তাফালবাড়ি, রাজৈর বটতলা, কুমারখালী। এসব জায়গার কাছাকাছি নদীতে সৃষ্টি হয়েছে গভীর খাদ।
শরণখোলা নদী শাসন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিলন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত নদী শাসন না করা হলে খুব শিগগিরই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে শরণখোলায় নব নির্মিত বেড়িবাঁধ।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, নির্মিত বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ফাটলসহ নানা ত্রুটির কথা শোনা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী ভাঙনের কথাও শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন