এবার অং সান সু চির সম্মাননা কেড়ে নিল অ্যামনেস্টি
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সোমবার এক ঘোষণায় সংস্থাটি জানিয়েছে, সু চি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে ‘লজ্জাজনকভাবে’ সরে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর: বিবিসি ও রয়টার্স
২০১৭ সালের আগস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান ও নির্যাতনের মুখে নতুন করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এরপর কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠান সু চিকে দেয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নেয়। বাতিল করা হয় তাকে দেয়া নাগরিকত্বও।
এসবের মধ্যে রয়েছে, কানাডার পার্লামেন্টের দেয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেয়া ফ্রিডম অফ সিটি খেতাবসহ অনেক সম্মাননা।
আর সোমবার এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সম্মাননা।
২০০৯ সালে অং সান সু চিকে ‘অ্যাম্বাসাডর অফ কনসেন্স’ বা ‘বিবেকের দূত’ খেতাব দিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। জান্তা সরকারে আমলে গৃহবন্দি থাকার সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সু চির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা দেয়া হয়েছিল।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে অং সান সু চিকে এ খবর দিয়েছেন।
এতে তিনি লিখেছেন, ‘আট বছর আগে গৃহবন্দি থাকা নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন উদাসীন।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সংস্থার একজন দূত হিসেবে সু চির কাছে প্রত্যাশা ছিল, শুধু মিয়ানমারের ভেতরে নয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কর্তৃত্ব ও ভূমিকা রাখবেন।
কুমি নাইডু আরও লেখেন, ‘কিন্তু, আমরা গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত। কারণ, আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে দেয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনসেন্স’ সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না।’
অ্যামনেস্টির ভাষ্যে, অং সান সু চির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল।
রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযানের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, গতবছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজারো মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী ও শিশু। আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে অং সান সু চি ও তার দফতর তাদের রক্ষা করেছেন। রোহিঙ্গাদের পক্ষে সু চির দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ভয়ঙ্কর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের এসব ঘটনা অস্বীকার করে সু চি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে রাষ্ট্রযন্ত্র।
সংস্থাটি বলছে, সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইন তৈরি ও সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে। কিন্তু, সু চির সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু’বছরের মাথায় মানবাধিকার কর্মী, শান্তিকর্মী ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, অং সান সু চি সাহায্য করুন আর নাই করুন, মিয়ানমারে বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন