এবার পরীমনির বিরুদ্ধে গুলশানে ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ, যা বললেন পরীমনি
চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত ৭ জুন ক্লাবে ভাঙচুর চালিয়েছেন এ অভিনেত্রী।
এ বিষয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কে এম আলমগীর জানান, গত ৭ জুন রাত ১টার দিকে ক্লাবে যান পরীমনি। তার সঙ্গে একজন পুরুষ আর একজন নারী ছিলেন।
তিনি জানান, যেই সদস্যের মাধ্যমে ওইদিন পরীমনি ক্লাবে এসেছিলেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কে এম আলমগীর বলেন, ক্লাবের অতিথির বিরুদ্ধে ক্লাব কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার নেই। ক্লাবের সুনাম যেন ক্ষুন্ন না হয় তাই থানায় কোনো জিডি বা অভিযোগ করা হয়নি।
যা বললেন পরীমনি
বোট ক্লাবের ঘটনা আড়াল করতে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি।
রাজধানীর গুলশানে অল কমিউনিটি ক্লাবে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগের বিষয়ে বুধবার (১৬ জুন) রাতে বনানীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন তিনি।
পরীমনি বলেন, এটা খুবই স্পষ্ট এবং বোঝা যাচ্ছে আমাকে এখন নানা রকমভাবে… এটা ষড়যন্ত্র। তারা যদি প্লান করে হেনস্তা করে, আসলে এটা দুঃখজনক। আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে এখন ঠিক নাই। আর এ রকম অপ্রীতিকর আমি কিছু যদি ঘটিয়ে থাকি তাহলে সেটা এতদিন পর কেন মিডিয়ার সামনে আসলো। যদি ৮ তারিখের ঘটনা হয়ে থাকত তাহলে কোনো না কোনোভাবে মিডিয়ার কাছে অবশ্যই পৌঁছাত। আপনারা সবাই বিষয়টি বুঝতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটা নিয়ে কথা হয়েছে, আমি চাই এটা নিয়েও তদন্ত হোক। এটাও আমরা সবাই জানার চেষ্টা করি। আপনারা আমাকে হেল্প করেন।
ইস্যু গুলশানে ক্লাব
চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি বার-কর্মীদের মারধরও করেছেন।
গত ৭ জুন গভীর রাতে গুলশানের ১৩৭ নম্বর রোডে অবস্থিত ওই ক্লাবে এ ঘটনা ঘটে।
তবে ক্লাবে ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নায়িকা।
গুলশান থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত ৭ জুন গভীর রাতের এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় জিডি বা মামলা হয়নি। তবে পুলিশ নতুন করে ওই ঘটনা তদন্তে ক্লাব পরিদর্শনে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে পরীমনি বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা আমি জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনারা কী করেছেন? আমি যদি কোনো প্রবলেম করে থাকি বা অপরাধ করে থাকি তাহলে তারা কেন এতদিন চুপ করে ছিল। এতদিন পর আমি যখন অভিযোগ করলাম, বিষয়টি সবার সামনে আনলাম, এখন কেন তারা আমার বিরুদ্ধে লাগছে এতদিন পর?
এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। নায়িকা বলেন, আমার এতদিক থেকে এত চাপ, সত্যিই এবার ক্লান্ত। আমি চাচ্ছিলাম যে তারা গ্রেফতার হয়েছে, সুবিচার হবে।
‘এখন আমার পক্ষে কে লড়বে, কে লড়বে না- এসব নিয়ে এখন আমি ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে উল্টো ব্লেম করা হচ্ছে নানা দিক থেকে। যেটা একেবারেই ভিত্তিহীন। একরকম আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
ওই রাতে ক্লাবে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, হ্যাঁ গিয়েছিলাম। সেটা সিসিটিভির ফুটেজে আপনারা দেখেছেন। আমি যদি অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটিয়ে থাকি তাহলে আটদিন পর কেন আসলো। তারা তো আমার মতো ভিকটিম হয়নি। তাদের কোনো বাধা ছিল না, পরের দিন বা সঙ্গে সঙ্গে কমপ্লেইন করার। এটা খুবই স্পষ্ট, সবাই এটা বুঝতে পারছে।
এ ব্যাপারে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৭ জুন গভীর রাতে ৯৯৯ এ কল পেয়ে গুলশান থানা পুলিশের একটি টিম অল কমিউনিটি ক্লাবে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে পরীমনি ক্লাবে গ্লাস ভাংচুর করেছেন। পরে আর এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, বোট ক্লাবের ঘটনার দুই দিন আগে ৭ জুন গভীর রাতে চিত্রনায়িকা পরীমনি গুলশানের ১৩৭ নম্বর রোডে অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডে ভাংচুর করেন। এ সময় ওই ক্লাবে থাকা বেশ কয়েকজন বার কর্মীকে মারধরও করেন বলে অভিযোগ এই নায়িকার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগে উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফোন পেয়ে পুলিশ অল কমিউনিটি ক্লাবে গিয়েছিল। পুলিশ সেখানে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে পুলিশ থানায় এসে নিয়ম অনুযায়ী ঘটনার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
গত ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। ঘটনার চার দিন পর রোববার রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এবং রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনা প্রকাশ করেন নায়িকা পরীমনি।
সোমবার সকালে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন তিনি। ওই দিনই প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মাদক ও ইয়াবা জব্দ করা হয়।
এর আগে পরীমনির বিরুদ্ধে কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে ৭টার দিকে অল কমিউনিটি ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ক্লাবটির সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল।
এবার পরীমনির বিরুদ্ধে থানায় জিডি
বোট ক্লাবের ঘটনার আগের রাতে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে পরীমনির বিরুদ্ধে। ৮ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে, সেদিন রাত একটা ৩৯ মিনিটে এক ব্যক্তির সঙ্গে অল কমিউনিটি ক্লাবে আসেন পরীমনি। এর ঘন্টাখানেক পর সেখানে তাকে লক্ষ্যহীন ঘোরাফেরা করতেও দেখা গেছে। এরপর সাদা রঙের একটি গাড়িতে করে চলে যান তিনি।
পুলিশ বলছে, সেদিন রাতে ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চান এই চিত্রনায়িকা। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গুলশান থানায় জিডি করে পুলিশ। এর ৮ দিন পর ক্লাবে ভাংচুরের অভিযোগ আনলো কর্তৃপক্ষ। ৮ তারিখ রাত প্রায় একটার দিকে অলকমিউন্টি সেন্টারে আসে পরীমনিসহ আরেকজন। এর আগে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে ছিলো পরীমনীর পরিচিত আরো একজন, যিনি এই ক্লাবের সদস্য।
এ বিষয়ে অল কমিউনিটি ক্লাব লিমেটেডের প্রেসিডন্ট কে এম আলমগীর ইকবাল বলেন, ক্লাব বন্ধ হওয়ার সময় হওয়ায় তাদের প্রথমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে ক্লাব সদস্যসের অনুরোধে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়। আধাঘন্টা তাদের সার্ভ করলেও পরে তাদের বের হয়ে যেতে বলা হয়।
কিন্তু পরীমনী বের না হয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু করে, ১৫ টা গ্লাস, ৯ টা স্টেসহ আরো কিছু হাফপ্লেট ভাঙ্গে। পরীমনিরাই ৯৯৯ এ ফোন দেয়, পুলিশ এসে তাদের বের হয়ে যেতে বলে। এ ঘটনায় ক্লাব সদস্যর বিরুদ্ধে সোকেস করা হয়েছে। কিন্তু পরীমনির বিরুদ্ধে কোনো জিডি করেনি বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুন উত্তরার পাশের বিরুলিয়ার ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনির উপর চড়াও হন নাসির। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি মারধরও করা হয়। এরপর থেকে আলোচনায় তুরাগ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঢাকা বোট ক্লাব। পরীমনির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাসিরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।
উল্লেখ্য, ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনির ওপর ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিনেত্রী নিজেই অভিযোগ আনেন। রোববার (১৩ জুন) রাত পৌনে ১১টার দিকে বনানীর নিজ বাসায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমনি।
তার আগে পরীমনির একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে মুহূর্তেই তোলপাড় হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এ ঘটনায় মামলায় ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ (৬৫), তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩), লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে ওই পাঁচজনকে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওইদিন সকালে ব্যবসায়ী নাসির মাহমুদসহ ছয়জনকে আসামি করে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন পরীমনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন