এভারেস্টে আরোহণের নিয়মে বড় পরিবর্তন আনছে নেপাল

মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের অনুমতি দেয়ার নিয়মে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নেপাল সরকার। নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী, এভারেস্টে আরোহণের জন্য পর্বতারোহীদের নেপালের ভেতরে অন্তত ৭ হাজার মিটার উচ্চতার একটি শৃঙ্গ জয় করতে হবে।
সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত ১৮ এপ্রিল নেপালের সংসদের উচ্চকক্ষে উত্থাপিত ইন্টিগ্রেটেড ট্যুরিজম বিল এভারেস্টে অতিরিক্ত ভিড়, পর্বতারোহীদের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য নেপাল আগে থেকেই সমালোচিত হয়ে আসছে। অতিরিক্ত এবং অনেক সময় অদক্ষ পর্বতারোহীকে অনুমতি দেয়ায় ভিড়, দূষণ এবং প্রাণঘাতী জটিলতা বেড়েছে।
প্রতিবছর বিদেশি পর্বতারোহীদের অনুমতি দিয়ে নেপাল যে পরিমাণ অর্থ পায়, তা দেশটির জন্য বড় আয়ের উৎস। নেপাল বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে আটটির অধিকারী।
পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এভারেস্টে আবর্জনা, মানববর্জ্য এবং পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। অতিরিক্ত উচ্চতায় উদ্ধার অভিযান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল।
তাই কিছু নতুন নিয়ম নিয়ে আসছে নেপাল। এ ক্ষেত্রে এভারেস্টের অনুমতির জন্য পর্বতারোহীদের অবশ্যই নেপালের ভেতরে ৭ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার কোনো শৃঙ্গ জয় করার সনদ জমা দিতে হবে। পর্বতারোহীদের সহকারী হিসেবে যে মাউন্টেইন গাইড থাকবেন, তাঁকে নেপালের নাগরিক হতে হবে। আবেদনকারীদের সাম্প্রতিক এক মাসের মধ্যে সরকারি স্বীকৃত মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে স্বাস্থ্যসনদ আনতে হবে। পর্বতারোহীরা যদি কোনো রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করেন, তা আগে থেকেই ঘোষণা দিতে হবে।
এ ছাড়া নতুন নিয়মে অনুমতিপত্র অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যাবে না। তবে কোনো দুর্যোগ, যুদ্ধ বা অনিবার্য কারণে অভিযান বন্ধ হলে অনুমতি দুই বছরের জন্য বৈধ থাকবে, অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না।
তবে আন্তর্জাতিক অভিযান সংস্থাগুলো শুধু নেপালের নিজেদের দেশের ৭ হাজার মিটার শৃঙ্গ জয় করা পর্বতারোহীদের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, অন্য দেশেও ৭ হাজার মিটারের কাছাকাছি উচ্চতার অনেক শৃঙ্গ আছে, যেগুলো এভারেস্টের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ।
অস্ট্রিয়ার ফার্টেনবাখ অ্যাডভেঞ্চারস-এর লুকাস ফার্টেনবাখ বলেছেন, ‘এভাবে শুধু নেপালের শৃঙ্গের শংসাপত্র চাওয়া যৌক্তিক নয়।’
উল্লেখ্য, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার। নেপাল ও চীনের যৌথ জরিপে ২০২০ সালে এটি নিশ্চিত করা হয়। এই পর্বতের দুর্গম অঞ্চলগুলোর মধ্যে খুম্বু আইসফল ও হিলারি স্টেপকে সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘ডেথ জোন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৫ সালের এভারেস্ট অভিযান মৌসুম শুরু হয়েছে এপ্রিলে। এ পর্যন্ত নেপাল ৪০২টি আরোহণের অনুমতি দিয়েছে এবং মে মাসের মধ্যে এই সংখ্যা ৫০০ ছাড়াতে পারে। প্রায় এক দশক পর প্রথমবারের মতো এভারেস্টের অনুমতির ফি ৩৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে এভারেস্টে কেউ আরোহণ করতে চাইলে তাকে ১১ হাজার ২৪৮ পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ লাখ টাকার বেশি।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন