এমপিও দিতে কত টাকা লাগবে জানে না মন্ত্রণালয়
সারাদেশে এমপিও বাইরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সুবিধার আওতায় আনতে মোট কত টাকা লাগবে, সেই হিসাব নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট কত জন শিক্ষক রয়েছে সেই পরিসংখ্যানও অজানা।
অথচ এমপিওভু্ক্তির দাবিতে শিক্ষকদের অনশন শেষ বছরে সরকারের জন্য চাপ তৈরি করেছে। শুরুতে শিক্ষকদের কর্মসূচিতে গুরুত্ব না দিলেও অষ্টম দিনে এসে শিক্ষামন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন শিক্ষকদের কাছে। চেষ্টা করেছেন বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদেরকে তুলে দিতে।
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে, মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, বিদেশ থেকে ফিরে অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করবেন তিনি।
তবে শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে আস্থা নেই শিক্ষকদের। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ধরনের আশ্বাস এর আগেও পেয়েছেন তারা। এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস চান তারা।
শিক্ষকরা রবিবার থেকে আমরণ অনশন করলেও এর আগের পাঁচ দিন ছিলেন অবস্থান কর্মসূচিতে। আর শনিবার অনশনের ঘোষণা দেয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই ধরনের কর্মসূচি করে লাভ নেই, শিক্ষকরা যেন বাড়ি ফিরে যায়।
প্রতি নির্বাচিত সরকারের আমলেই দেখা গেছে, শেষ বছরে এসে শিক্ষকরা নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষক নেতারা জানান, শেষ বছরে দাবি আদায় সহজ হয়। কারণ ভোটের কথা চিন্তা করে হলেও সরকার নমনীয় থাকে।
শিক্ষামন্ত্রীও শুরুতে পাত্তা না দিলেও অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে তার শিক্ষকদের কাছে ছুটে যাওয়াতে এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি আর অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না।
তবে সরকারের বাকি মেয়াদে সবাইকে এমপিওভূক্ত করা যে সহজ কথা নয়, সেটি বলছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই। কারণ, এই খাতে কত টাকা লাগবে সেই হিসাব নেই তাদের কাছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সরকারি মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষকদের এমপিও দিতে কত টাকা লাগবে তার হিসাব আমাদের কাছে নেই। কারণ এটি আমরা কোন প্রক্রিয়া দেবো সেটার জন্য নীতিমালা লাগবে। এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত নীতিমালা হয়নি ‘
এক প্রশ্নের জবাবে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমরা একটা খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছি। সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এটি চূড়ান্ত করবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এরপর ঠিক হবে আমরা কাদেরকে এমপিও দেবো। কারা এমপিও পাবার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর আগে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে সে বিষয়ে কোনো পূর্বানুমান করা সম্ভব না।’
২০১০ সালে ব্যানবেইসের জরিপে এমপিওভুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল আট হাজার ৫৫। ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি স্কুলকে এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু এখন এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো। অর্থাৎ এই সময়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে একটা বেসরকারি হিসাবে দেখা গেছে, এমপিওভুক্তির শর্তপূরণ করেছে—এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মাসিক বেতনের আওতায় আনতে সরকারকে প্রতিবছর এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
এই অর্থকে সরকার চাপ হিসেবে দেখছে। অথচ স্কুলে চলন্ত সিঁড়ি তৈরির একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার যাতে প্রাথমিকভাবে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার দুইশ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোনো তরফ থেকেই দাবি না উঠা এই প্রকল্প না করলেই শিক্ষকদের এক বছরের এমপিওভুক্তির টাকা হয়ে যায়।
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলছেন, এমপিওর সিদ্ধান্ত কোনো একটি বিশেষ সময়ের জন্য নয়। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক এমপিওর সুবিধায় আসলে এটা আজীবন থাকবে। এই শিক্ষক মারা গেলে তার জায়গায় যিনি আসবেন, তারাও পাবেন এই সুবিধা।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, সরকার এই টাকার সংস্থান করতে পারবে। শিক্ষক নেতারা বলছেন, দেশের বাজেট চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এখানে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার সংস্থান করা কোনো ব্যাপার হবে বলে তারা মনে করেন না।
এমপিও সুবিধা পেলে শিক্ষকদের মূল বেতনের শতভাগ এখন সরকার দেয়। সঙ্গে কিছু ভাতাও দেয়া হয়। আর এর সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু টাকা পেলে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়।
কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান এসব সুবিধা পায় না, তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া টাকার ওপর নির্ভর করতে হয়। আর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও সুবিধার বাইরে, তার সবই গ্রাম এলাকায়। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র খুব বেশি না আর এই কারণে তাদের আয়ও বেশি না। ফলে তারা শিক্ষকদের খুব একটা আর্থিক সহযোগিতা করতে পারে না।
যে শিক্ষকরা আন্দোলন করতে এসেছেন, তাদের অনেকের জীবনের কাহিনিই করুণ। তাদের মধ্যে এমনও আছেন যারা ১৮ বছর ধরে চাকরি করেও বেতন পাচ্ছেন না।
একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ছাড়্র পড়িয়েও তাদেরকে আয়ের অন্য ব্যবস্থা করতে হয়। আর তারা যে বেতন পান না, এই বিষয়টি অজানা নয় পরিচিতজনদের। এ কারণে বিপদে পড়লে তারা ধারকর্জও করতে পারেন না। দোকানেও বাকি দিতে চায় ন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের সঙ্গে সমব্যাথী। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী যেহেতু আমাদেরকে কথা দিয়েছেন, আশা করি টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমরা শিক্ষকদের জন্য কাজ করছি। শিক্ষকদের এমপিও দেয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন