এরশাদের ‘শিগগিরই পদত্যাগ’ আর কত দূর?

জাতীয় পার্টি সরকারি না বিরোধী দল—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে দলটির কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের এমন প্রশ্নে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনা হচ্ছে, আসলেই কি জাপা মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চায়? সমালোচনা হচ্ছে, জাপার মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে কেন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এটা তো জাপার দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তখন থেকে আলোচনা শুরু হয় জাতীয় পার্টি সরকারি না বিবোধী দল। কেননা, একদিকে দলটি সংসদের বিরোধী দল। বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। অন্যদিকে, এই দলের তিন নেতা সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য। দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, এটিও মন্ত্রী পদমর্যাদার।

গত মঙ্গলবার সংসদে রওশন এরশাদ তাঁর দলের তিন সাংসদকে মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার করতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান। তাঁরা বিরোধী দল নাকি সরকারি দল বুঝতে পারেন না বলেও জানান। সংসদে রওশনের এ বক্তব্যের পর জাপার সাংসদদের মন্ত্রিসভায় থাকা না-থাকার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

জাতীয় পার্টির ‘পরিচয় সংকট’ নিয়ে যখনই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তখনই দলটির চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত (মন্ত্রী পদমর্যাদা) বলছেন, ‘শিগগিরই’ দলের মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রংপুরে এইচ এম এরশাদ বলেছেন, ‘কিছুদিনের’ মধ্যেই তিনিসহ অন্য মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন।

দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বললেও নিজে ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের’ পদ থেকে পদত্যাগ করেননি।

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শপথ নেন জাপার তিন মন্ত্রী। তাঁরা হলেন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙা।

জাপার কো–চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের বলেন, জাপা এখনই মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়াবে—এমন সম্ভাবনা তিনি দেখেন না। এ নিয়ে দলের ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি।

সরকারের মন্ত্রী আবার বিরোধী দলেও—শুরুতেই এমন সমালোচনায় পড়ে জাপা। এর মধ্যেই মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবি জোরালো হতে থাকে। একপর্যায়ে ওই বছরের ২১ জুলাই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে এইচ এম এরশাদ বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলবেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এরশাদ কেন পদত্যাগ করছেন না। ২২ জুলাই মুজিবুল হক ও মশিউর রহমান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্যার (এরশাদ) পদত্যাগ করতে বলতে তাঁরা পদত্যাগ করবেন। পাশাপাশি তাঁরা এরশাদের পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আনেন। এরপর এইচ এম এরশাদ মন্ত্রীদের ‘শিগগিরই’ পদত্যাগ করতে বলেছেন এমন কথা শোনো যায়নি।

এরপর ২০১৫ সালের ৪ মে রংপুরে এক কর্মিসভায় সংসদে ‘প্রকৃত বিরোধী’ দলের ভূমিকা পালনের জন্য তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি বনানীতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ তাঁর দলের মন্ত্রীদের শিগগিরই পদত্যাগ করতে বলবেন বলে জানান। পদত্যাগ করতে বলার পর না করলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থান নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গণমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী ২০১৫ সালের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে এইচ এম এরশাদ আরও অন্তত আটবার দলীয় মন্ত্রীদের শিগগিরই পদত্যাগ করতে বললেন বলে জানিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহল আমিন হাওলাদার বলেন, দলের চেয়ারম্যান বলেছেন মন্ত্রীরা কিছুদিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন। তাই এরপর আর এ নিয়ে তাঁর কথার বলার কিছু নেই।

জাতীয় পার্টির প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান বলেন, দলের সিদ্ধান্তে তাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন। দল না চাইলে মন্ত্রী থাকবেন না। এটা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে। সিদ্ধান্ত হলে জানানোর পর সবকিছুই নিয়ম অনুযায়ী হবে।

মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার তিন মন্ত্রী রওশন এরশাদের অনুসারী। এত দিন এরশাদ মন্ত্রীদের পদত্যাগের কথা বললেও রওশন এ ব্যাপারে নিশ্চুপই ছিলেন। হঠাৎ কেন তিনি মন্ত্রীদের পদত্যাগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন, তা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে গুঞ্জন ও আলোচনা চলছে। সূত্র : প্রথম আলো