এলাকাবাসীর উদ্যোগে ময়ূরী নদীতে ভাসমান সেতু নির্মাণ

খুলনা নগরীর আরাফাত আবাসিক প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়ূরী নদীতে এলাকাবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে একটি অনন্য ভাসমান সেতু। দীর্ঘদিন ধরে নদী পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু সরকারী সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই এবার এগিয়ে এসেছেন এলাকাবাসী।

১১০ ফুট দীর্ঘ এই ভাসমান সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পরওয়ারের ৫০ হাজার টাকার অনুদান সাহস যোগালেও, এর বাকি অর্থ সম্পূর্ণ এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে জোগাড় করেছেন। প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার হন প্রায় ২ হাজার মানুষ, যার বড় অংশই শিক্ষার্থী।

উদ্যোক্তা স্থানীয় জামায়াত নেতা আব্দুর রশিদ মল্লিক বলেন, আমাদের শিশুরা, নারীরা এবং বৃদ্ধরা ময়ূরী ব্রিজ ঘুরে না গিয়ে যেন সহজে নদী পার হতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ।

১২টি ফ্রেম এবং ৪৮টি শক্তিশালী ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি নির্মাণে মুখ্য ভূমিকা রাখেন সাব-কন্ট্রাক্টর আলী হোসেন। তিনি বলেন, এই নদী পার হওয়াই ছিল বড় ভোগান্তি। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পার হতো। তাই চিন্তা করলাম, যদি ভাসমান সেতু বানানো যায়!

নতুন সেতুটি চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে এলাকার প্রতিটি পরিবারে। স্কুলছাত্রী ফাতেমা বলেন, আগে আমাদের অনেক কষ্ট করে ময়ূরী ব্রিজ ঘুরে স্কুলে যেতে হতো। এখন নতুন এই ব্রিজটি হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। খুব সহজে স্কুলে যেতে পারি, আবার বাসায়ও ফিরতে পারি।

আরেক শিশু আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের অনেক আত্মীয়-পরিজন শহরে কাজ করে, আগে অনেক দূর ঘুরতে হতো, এখন সোজা পথে যাওয়া-আসা করতে পারছি। এতে অনেকটা সময় বাঁচছে এবং এলাকার সবাই খুব খুশি।

স্থানীয় বাসিন্দা সাবিহা আফরিন রিনা জানান, এটি খুব সুন্দরভাবে নির্মিত হয়েছে, আমরা সবাই এখন সহজে পারাপার হতে পারছি। যাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এলাকার একজন প্রবীণ বাসিন্দা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, এটা আমাদের একতা ও উদ্যোগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে যে কোনো অসম্ভবই সম্ভব!

এলাকার মানুষের মতে, এই সেতু শুধুই একটি কাঠামো নয়, এটি আশা, ঐক্য আর আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক। যেখানে অনেক জায়গায় উন্নয়ন হয় সরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভর করে, সেখানে ময়ূরী এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে সাফল্যের সঙ্গে এক স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন যা আগামী দিনের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। যেখানে অনেক এলাকায় মানুষ উন্নয়নের অপেক্ষায় বসে থাকে, সেখানে খুলনার এই এলাকাবাসী দেখিয়ে দিয়েছেন—চাইলে জনগণ নিজেরাই স্বপ্ন বুনে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।